তরমুজের বাজারে লকডাউনের প্রভাব নেই, দামও ভালো
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
স্টাফ রিপোর্টার : এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ায় পরিবহনসংকটের কারণে দক্ষিণের তরমুজচাষিরা লোকসানের আশঙ্কায় ছিলেন। তাঁদের সেই আশঙ্কা দূর হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মহাজনেরা সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে তরমুজ কিনছেন। পরে তাঁরা এসব তরমুজ খেত থেকে সরাসরি ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। আর দামও মিলছে ভালো। ভালো ফলন আর ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে দক্ষিণের হাজারো চাষির মুখে।
গত কয়েক বছরে দক্ষিণের ছয় জেলায় তরমুজ আবাদকে ঘিরে কৃষিক্ষেত্রে এক বড় আর্থিক খাত দাঁড়িয়ে গেছে। এই খাত থেকে বছরে আয় অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা।
কৃষি বিভাগ বলছে, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় এবার প্রায় ১২ লাখ ২৪ হাজার ৫০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদনের আশা করা হয়েছিল। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও উৎপাদন হয়েছে অনেক বেশি। প্রতি কেজি ১০ টাকা মূল্য ধরা হলেও উৎপাদিত এই তরমুজের বাজারমূল্য দাঁড়াবে প্রায় ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকার বেশি। দেশের অর্থনীতিতে এটা বড় অর্জন বলে মনে করছেন তাঁরা। এরই মধ্যে খেত থেকে ৭০ শতাংশ তরমুজ শেষ।
বিজ্ঞাপন
গ্রীষ্মকালের রসাল ফল তরমুজ উৎপাদনেও দিন দিন সাফল্য পাচ্ছেন দক্ষিণের চাষিরা। বিশেষ করে এ অঞ্চলের এক ফসলি জমিকে নিজেদের বুদ্ধিমত্তা ও কৌশল দিয়ে বহু ফসলি জমিতে রূপান্তরের এই প্রয়াস কৃষিক্ষেত্রে আশা জাগাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বরিশাল অঞ্চলে এবার তরমুজ আবাদ হয়েছে ২৪ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদনের হার ৫০ মেট্রিক টন। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় উৎপাদনও বেড়েছে। বরাবরের মতো পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে ১৪ হাজার ২৩৬ হেক্টর, বরগুনায় ৪ হাজার ৪৩ হেক্টর, ভোলায় ৫ হাজার হাজার ৫৫৬ হেক্টর, বরিশালে ৪৬৩ হেক্টর, পিরোজপুরে ১ হাজার ১৪৮ হেক্টর ও ঝালকাঠিতে ৩৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ২৪ হাজার ৬৮৮ হেক্টর জমিতে।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর জাহাজমারা এলাকার কৃষক ফেরদৌস প্যাদা (৫০) বলেন, তাঁদের জমি নেই। তাঁরা অন্যের অনাবাদি জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় এবার লাভবান হয়েছেন।
বরগুনার আমতলী উপজেলার পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের চাষি মাহবুব মাতুব্বর বলেন, ‘এ বছরের মতো এত দামে কোনো বছর তরমুজ বিক্রি করতে পারিনি। ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২ একর জমিতে তরমুজের চাষ করেছিলাম। ওই জমির তরমুজ ১২ লাখ টাকা বিক্রি করেছি।’
কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর আমতলীতে তরমুজের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৯৯০ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছে ৬৯ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন তরমুজ। প্রতি টন ৩০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে প্রায় ২১০ কোটি টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় ছিল চার গুণ।
শুক্রবার বরিশালের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, লকডাউনের মধ্যেও বাজারে ক্রেতা রয়েছেন। মাঝারি ধরনের একটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়। বড় ধরনের তরমুজ ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় চার গুণ। বটতলা বাজারের তরমুজ ব্যবসায়ী মাসুম মিয়া বলেন, ‘এবার এত তরমুজ উৎপাদন হয়েছে, তা বলে বোঝাতে পারব না। বাজারে চাহিদাও বেশি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বিভাগের ৬ জেলায় ৩৫ হাজার ২৯১ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছিল। কিন্তু তার প্রায় অর্ধেক ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই বছরের মার্চ-এপ্রিলের অতিবর্ষণের কারণে। ফলে উৎপাদন তার আগের বছরের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়। এ কারণে ২০১৮ সালে তরমুজ আবাদের পরিমাণ কমে ১৯ হাজার ২৮১ হেক্টরে পৌঁছেছিল। কিন্তু এরপর ধারাবাহিকভাবে তরমুজের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর মাটি-পানিতে লবণাক্ততা বাড়ায় ও ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে ধান উৎপাদনে ধস নামে। এতে এ অঞ্চলের লাখ লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। পরপর কয়েক বছর ধান উৎপাদন কমতে থাকে। এর মধ্যে কৃষকেরা বিকল্প হিসেবে তরমুজ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ব্যাপক হারে তরমুজ চাষ বাড়তে থাকে ২০১১ সাল থেকে।
বরিশাল আঞ্চলিক মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সাব্বির হোসেন বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের জমিতে লবণাক্ততার মাত্রা থাকে এলাকাভেদে ২ থেকে ১২ ডিএস/মিটার। এটা ফসল উৎপাদনের জন্য সহনীয় না হলেও এখানে সুবিধা হলো এ অঞ্চলের তরমুজ আবাদের বেশির ভাগ জমির মাটি দো-আঁশ প্রকৃতির। দো-আঁশ মাটিতে পরিমিত সেচ ও মালচিং বা জাবরা ব্যবহার (মাটির রস ধরে রাখার পদ্ধতি) করে সহজেই লবণাক্ততা ঠেকিয়ে ফসল আবাদ করা যায়। তবে এ জন্য কৃষকদের মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষণ বা সচেতনতা বাড়ানো গেলে কৃষিক্ষেত্রে আরও সাফল্য আসবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আফতাব উদ্দীন বলেন, কৃষিক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চলের সাফল্য দিন দিন উজ্জ্বল হচ্ছে। এখন বেশির ভাগ জমিই বহু ফসলি হওয়ায় সব ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা দেশের গোটা অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে।