ইউপি নির্বাচন : বরিশালে বোমা হামলা গুলি বর্ষণ, নিহত ১, আহত অর্ধশত

স্টাফ রিপোর্টার : বরিশালে দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বোমা হামলা, গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন এক জন ও আহত হয়েছে আরো অর্ধশত মানুষ। পাশাপাশি জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ভোট বর্জণের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে কোন কোন কেন্দ্রে পুলিশ ফাকা গুলিবর্ষন করেছে। আজ সকাল থেকে বরিশাল জেলার সর্বত্র গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহের লাগাতার বৃষ্টিতে গ্রামীন জনপদের সর্বত্র কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে। অনেক কেন্দ্রের মাঠে পানি জমেছে। তবে সবকিছু উপেক্ষা করে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহন শুরুর আগেই ভোটারদের লাইন পড়ে যায়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কেন্দ্রে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা থেকে ছেলেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে এসে লাশ হয়েছেন মৌজে আলী মৃধা (৬৫) নামের এক বৃদ্ধ। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার বেলা বারোটার দিকে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড কমলাপুর ভোট কেন্দ্রে।
জানা গেছে, গত দুইদিন পূর্বে ঢাকা থেকে পুত্রদের সাথে পছন্দের ইউপি সদস্য প্রার্থী মোঃ ফিরোজ মৃধাকে ভোট দিতে আসেন কমলাপুর গ্রামের মৃত কাদের মৃধার পুত্র মৌজে আলী মৃধা। সোমবার দুপুর বারোটার দিকে কমলাপুর ভোট কেন্দ্র থেকে সে (মৌজে আলী) ভোট দিয়ে বের হন। প্রত্যক্ষদর্শী কাওসার হোসেন বলেন, মোরগ মার্কার প্রার্থী ফিরোজ মৃধার প্রতিদ্বন্ধী টিউবওয়েল মার্কার প্রার্থী মন্টু হাওলাদারের পক্ষে কয়েকজনে জাল ভোট প্রদান করেন। এর প্রতিবাদ করায় দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ব্যাপক বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় বোমার আঘাতে ঘটনাস্থলেই বৃদ্ধ মৌজে আলী মৃধা নিহত এবং প্রার্থী ফিরোজ মৃধাসহ কমপক্ষে ১০ জন গুরুত্বর আহত হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ব্যাপক ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছেন। ঘটনার পরপরই ভোট গ্রহন বন্ধ থাকলেও প্রশাসনের ব্যাপক উপস্থিতিতে পূনরায় ভোটগ্রহন শুরু করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সহকারি পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
হিজলা উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের খগেরচর কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের কর্মীদের সঙ্গে ঘোড় প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসির উদ্দিনের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ৮ রাউন্ড ফাকা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশের সহকারী উপ পরিদর্শক মো. সেলিম জানান, ওই কেন্দ্রে কিছু সময়ের জন্য ভোটগ্রহন বন্ধ ছিল।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুলাদী উপজেলার কাজীরচর ইউনিয়নের ওয়াহেদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর প্রার্থী কাঞ্চন প্যাদার ও মাসুম সিকদারের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টায় আহত হয়েছে ১০ জন। মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম মাকসুদুর রহমান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ও বিজিবির ষ্টাইকিং ফোর্স লাঠিচার্জ করে দুপক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মুলাদী উপজেলার ৪ নং গাছুয়া ইউনিয়নের জাতীয় পার্টি মনোনিত লাঙল প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল মালেক সিকদার ভোট বর্জন করেছেন। সোমবার দুপুর দুইটার দিকে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ভোট বর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ রাত দেড়টা থেকে এলাকার চারপাশে বোম্বিং করে আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। আমার এজেন্ট বসার চিঠি প্রিজাইডিং অফিসার গ্রহণ করেনি। এজেন্ট বের করে দেয়া হয়। আমাকে বাসায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আমাকে ঘর থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। নৌকার প্রার্থী জসীম উদ্দিন তার লোকজন দিয়ে সীল পিটিয়েছে। নতুন করে ভোটগ্রহণ করা হোক। এটা নির্বাচন হতে পারে না, এটা মানুষের সাথে প্রতারণা। পুলিশের কাছে বার বার অভিযোগ করা হয়েছে তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। রাতে পুলিশের কাছে অভিযোগ দেওয়া হলেও সকাল সাড়ে ৮টার সময় পুলিশ আমার বাসায় আসে। আমি নিজেও নিরাপত্তাহীণতায় রয়েছি। ভোটারদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমি নিজেও ভোট দিতে যাইনি। কেননা আমি গেলেই হামলা করবে নৌকার সমর্থকরা।
মুলাদী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং রিটার্নিং অফিসার শওকত আলী বলেন, জাতীয় পার্টির ওই প্রার্থীর কাছ থেকে আমরা কোনো অভিযোগই পাইনি। উজিরপুরের জল্লা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী উর্মিলা বাড়ৈ অভিযোগ করেছেন, ৩-৪টি কেন্দ্রে তার এজেন্টদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি এবং কর্মী সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে।
এদিকে বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নে ব্যালট ছিনতাইয়ের চেস্টার ঘটনা ঘটেছে। ইউনিয়নের আবুল কালাম ডিগ্রী কলেজের ১ নং রুমে এই ঘটনা ঘটে। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ইব্রাহীম খলিল বলেন, কয়েকজন লোক দুপুর ১ টার দিকে ১ নং রুমের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মাহমুদ হোসেন এর কাছ থেকে ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালানো হয়েছে। তবে তারা নিতে পারেনি। কিন্তু ধস্তাধস্তিতে ২০ থেকে ২৫টি ব্যালট নস্ট হয়ে যায়। এ ঘটনায় দুই ঘন্টা এই কেন্দ্রে ভোট গ্রহন বন্ধ ছিল। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে ভোট গ্রহন শুরু হয়।