প্রশ্নবিদ্ধ রাশিয়ার অনুমোদিত ভ্যাকসিন
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
অনলাইন ডেস্ক : ১১ আগস্ট রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেন যে দেশের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রকরা বিস্তৃতভাবে ব্যবহারের জন্য বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রথম ভ্যাকসিন অনুমোদন করেছেন। কিন্তু বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা এ সিদ্ধান্তকে বিপজ্জনক বলে নিন্দা করেছেন। রাশিয়া এই ভ্যাকসিনের বৃহৎ পরিসরে ট্রায়ালও সম্পন্ন করেনি। পাশাপাশি এর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার দিকগুলোও যাচাই করা হয়নি। গবেষকরা অপর্যাপ্তভাবে পরীক্ষিত ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করার ফলে সাধারণ মানুষ ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন। এসবের বাইরে এটি বৈশ্বিকভাবে মানসম্পন্ন ভ্যাকসিন তৈরির যে প্রচেষ্টা তাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
ভ্যাকসিন বিজ্ঞানী পিটার হোটেজ বলেন, রাশিয়ানরা সম্ভবত অনেকগুলো প্রক্রিয়া ও ধাপকে এড়িয়ে গিয়েছে, যা আমাদের মতো ভ্যাকসিন বিজ্ঞানীদের উদ্বেগের মাঝে ফেলে দিয়েছে। যদি এটা ভুল পথে যায়, তবে তা বিশ্বব্যাপী নানা উদ্যোগকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
প্রজনন বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ফ্রানকোয়িস বালোক্স বলেন, এটি একটি বেপরোয়া ও মূর্খ সিদ্ধান্ত। গণহারে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা ভ্যাকসিন সঠিকভাবে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে না গেলে সেটি অনৈতিক। রাশিয়ার ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইনের কোনো ধরনের সমস্যা হলে তা স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং জনগণের মাঝে ভ্যাকসিনের গ্রহণযোগ্যতাকেও প্রভাবিত করবে।
নিজের ঘোষণায় পুতিন বলেছেন, রাশিয়ান রেগুলেটররা মস্কোর গ্যামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলিজ দ্বারা আবিষ্কৃত কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে, যদিও ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল এখনো সম্পন্ন হয়নি। এ ধরনের ট্রায়াল হাজারো মানুষকে ভ্যাকসিন কিংবা প্লাসেবো ইনজেকশন দেয়ার সঙ্গে জড়িত এবং তারপর ভ্যাকসিনটি রোগ প্রতিরোধ করতে পারে কিনা তা দেখা হয়। পাশাপাশি এর ফলে গবেষকরা ভ্যাকসিনটি নিরাপদ কিনা এবং এর দুর্লভ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা তার সন্ধানও করতে পারে, যা কিনা আগের ছোট এবং প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষাগুলোয় জানা যায় না। রাশিয়ার হেলথকেয়ার মন্ত্রী মিখাইল মুরশেঙ্কো বলেছেন, ভ্যাকসিনটি ধীরে ধীরে নাগরিকদের দেয়া হবে। তবে সবার আগে স্বাস্থ্যকর্মী ও শিক্ষকদের দেয়া হবে।
বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯-এর দুই শতাধিক ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে এবং যাদের অনেকগুলা এরই মধ্যে তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে আছে। আরো কিছু শিগগিরই শুরু করবে। কিন্তু গবেষকরা মনে করেন এর মাঝে প্রথম ভ্যাকসিনটি অনুমোদন পাওয়া থেকে এখনো কয়েক মাস দূরে আছে।
ডাটার স্বল্পতা
গ্যামালেয়ার ভ্যাকসিন প্রাথমিকভাবে দুটি ট্রায়ালে ৭৬ জন স্বেচ্ছাসেবীর মাঝে দেয়া হয়। যদিও ওই ট্রায়ালগুলো এবং অন্যান্য প্রাক-ক্লিনিক্যাল গবেষণার কোনো ফলাফল প্রকাশিত হয়নি এবং এই পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে।
ক্লিনিক্যালট্রায়ালসডটগভের তালিকা অনুযায়ী এই ভ্যাকসিন, যা কিনা দুটি ডোজে দেয়া হয়, তৈরি হয় দুটি অ্যাডেনেনাভাইরাস দ্বারা, যা করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে প্রকাশ করে।
ভ্যাকসিনের রাশিয়ান-ল্যাঙ্গুয়েজ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট অনুসারে, যে ৩৮ জন অংশগ্রহণকারী যারা একটি অথবা দুটি ডোজ গ্রহণ করেছে তাদের সবারই সার্স-কোভ-২-এর স্পাইক প্রোটিনের বিপরীতে অ্যান্টিবডি উত্পন্ন হয়েছে, ভাইরাসের কণাকে নিষ্ক্রিয় করার মতো সুপ্ত নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডিসহ। এই ফলাফলগুলো অন্যান্য ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পর্যায়ের ফলাফলের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এমনকি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোও একই, যেমন জ্বর, মাথাব্যথা এবং ইনজেকশন নেয়া স্থানে জ্বালাপোড়া।
হোটেজ আশা করেন যে গ্যামালেয়া ভ্যাকসিন সার্স-কোভ-২-এর বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ইমিউন প্রতিক্রিয়া গড়ে তুলবে। তিনি বলেন, কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন তৈরির প্রযুক্তিগত বিষয় খুব জটিল নয়। তবে কঠিন ব্যাপার হলো এই ভ্যাকসিনকে মানসম্পন্ন উপায়ে প্রস্তুত করা। এরপর ভ্যাকসিন নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করা এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে এটি আসলেই কভিড-১৯-এর বিপরীতে রক্ষা করতে পারছে কিনা তা দেখা।
কিন্তু গ্যামালেয়া ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল সম্পর্কে খুব অল্পই জানা যায়। ইমিউনোলজিস্ট ড্যানি আলটম্যান বলেন, আমি প্রটোকলের প্রকাশিত কোনো বিবরণ সন্ধান করতে সক্ষম হইনি। তিনি আশা করেন ট্রায়ালটি গভীরভাবে অংশগ্রহণকারীদের ইমিউন প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছে এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোও চিহ্নিত করেছে।
‘হাস্যকর অনুমোদন’
আলটম্যান বলেছেন তিনি উদ্বিগ্ন যে ভ্যাকসিনটি অন্যান্য রোগ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে, যখন ভ্যাকসিন দ্বারা অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, যা ভাইরাসকে বহন করে কোষে নিয়ে যাবে।
রাশিয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস অর্গানাইজেশনের প্রধান সাভেতলানা জাভিডোভা বলেন, এই তথ্যগুলোতে অনুমোদন পাওয়া নিশ্চিতভাবেই হাস্যকর। জাভিডোভা নিজেও উদ্বিগ্ন যে এই ভ্যাকসিন কভিড-১৯ থেকে সুরক্ষা দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে কিংবা এটার ক্ষতিকারক কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাবে কিনা তা নিয়ে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমি মনে করি, সুরক্ষা নজরদারির জন্য আমাদের সিস্টেমটি সেরা না।