আজ বুধবার আল কসিম প্রদেশের সাহইয়া সড়কে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় সুজন মল্লিক ঘটনাস্থলে নিহত হন। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরন করেছে। আর আহত হন তার বড় ভাই কামাল মল্লিক (৫০)। আহত কামাল মল্লিককে আল রাজ হাসপাতালে ভর্তিকরা হয়েছে।
নিহতের স্বজনরা জানায়, আজ দুপুরে সুজন মল্লিক ও তার বড় ভাই কামাল মল্লিক ব্যবসার জন্য মাল ক্রয় করে পিকাপ যোগে আলরাজ ঘাস মার্কেটে ফেরার পথে বিপরিত গামি অপর একটি পিকাপ এর সাথে মুখোমূখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই সুজন মল্লিকের মৃত্যু হয়। তবে তার আপন বড় ভাইর অবস্থা অতটা গুরুতর নয় বলে তাদের স্বজনরা জানিয়েছে।
নিহত সুজন মল্লিকের আপন চাচাতো ভাই রোমান মল্লিক জানায়, বরিশালের মুলাদী উপজেলার মুলাদী পৌরসভার তেরচর গ্রামের মরহুম নাজেম মল্লিকের বড় ছেলে মরহুম নুরু মল্লিকের ছোট ছেলে সুজন। তার মৃতদেহ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
]]>অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই বিধি মেনে এ বছর মুসলিম হজযাত্রীরা কাবা শরিফে উপস্থিত হতে শুরু করেছেন। অন্য বছরগুলোতে সারাবিশ্বের ২৫ লাখ মানুষ হজ পালনে গেলেও এ বছর তা হচ্ছে না।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বছর মাত্র এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার হজযাত্রীকে ধর্মীয় রীতি পালনের অনুমতি দিয়েছে। তার মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ সৌদি আরবে অবস্থিত বিদেশি নাগরিকরা। আর এক তৃতীয়াংশ হজযাত্রী সৌদি আরবের নাগরিক।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে দুই লাখ ৬৮ হাজার নয়শ ৩৪ জন এবং মারা গেছে দুই হাজার সাতশ ৬০ জন।
জানা গেছে, সৌদি সরকার এ বছর সকল হজযাত্রীদের ব্যয়, তাদের খাবার, হোটেল থাকার ব্যবস্থা, পরিবহন এবং স্বাস্থ্যসেবা দেবে। তবে এবার হজের খবর সম্প্রচারের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো কাবা শরিফে যাওয়ার অনুমতি পায়নি। এর আগে গত ৯০ বছরের মধ্যে হজ বাতিলের ঘটনা সৌদিতে ঘটেনি।
সৌদি আরবের ইতিহাসে এ বছরই সারাবিশ্ব থেকে মুসলমানরা হজ পালনের জন্য যেতে পারছে না। যারা হজ পালনের অনুমতি পেয়েছেন, তাদের অবশ্যই মাস্ক পরে, কেবল জমজম কূপের পানি পান করা সাপেক্ষে কাবা শরিফে উপস্থিত হতে দেওয়া হচ্ছে।
সবাইকে জায়নামাজ নিয়ে যেতে হচ্ছে। এর আগে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সারিবদ্ধভাবে নামাজ আদায় করা হলেও এ বছর একজন হজযাত্রী থেকে আরেকজনকে সবসময় দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে।
জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে কাজ করেন সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সৌদি আরবে এখনো যে কড়াকড়ি চলছে তাতে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সবাই। এছাড়া মহামারির প্রভাবে দেশটির তেলনির্ভর অর্থনীতিও মন্দার কবলে। এ অবস্থায় সৌদিতে বহু প্রতিষ্ঠানে বেতন কাটা হচ্ছে এবং শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হয়েছে।
করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ঘরে বসে দিন পার করছেন কাতারে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা। এতে চরম মানবেতর দিন পার করছেন তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, গত মার্চ মাসে প্রবাসীরা ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন যা চলতি অর্থবছরই শুধু নয় বিগত ১৫ মাসের মধ্যেও সর্বনিম্ন। চলতি বছরের নয় মাসে গড় রেমিট্যান্স ছিল মাসে ১৫৩ কোটি ডলার। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির প্রভাবে প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর পরিমাণ আরো কমতে পারে বলেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবশ্য গত জুন মাসে বৈদেশিক মদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩৪ ও ৩৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে।
মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে কর্মরত জয়নাল আবেদীন জানান তিন মাস ধরে তিনি দেশে টাকা পাঠাতে পারছেন না। গত মাসে বেতন ভাতাও পাননি। তিনি যে কারখানায় কাজ করেন সেটিও বন্ধ।
মানিকগঞ্জের সিংগাইরের জয়মন্টব গ্রামের আছিয়া খাতুনের দুই ছেলে সৌদি প্রবাসী। আরেক ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী। এতদিন তাদের সংসার খুব ভালোভাবে চলছিল। ঋণ করে ছেলেদের বিদেশে পাঠানো হলে সেই টাকা প্রায় সুদ হয়েছে। কিন্তু গত তিন মাস ধরে তারাই কষ্টে আছে। কাজ না থাকায় টাকা পাঠাতে পারছে না দুই ছেলেই। আছিয়ার চোখে এখন দুঃস্বপ্ন ভর করেছে।
ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ ও দোহারের কয়েক হাজার যুবক প্রবাসে কাজ করে। তাদের বদৌলতে বদলে গেছে অনেক গ্রামের চেহারা। দোহারের জয়পাড়া, রায়পাড়া, নারিশা, মুকসুদপুর, কার্তিকপুর, বাংলাবাজার, শাইনপুকুর, ধোয়াইর, মেঘুলা, মালিকান্দা, সুতারপাড়া ও নবাবগঞ্জের বান্দুরা, কলাকোপা, হাসনাবাদ, বাগমারা, নয়নশ্রী, গোবিন্দপুর, আগলা, চুরাইন গ্রামের আনন্দ থেমে গেছে। মূলত প্রবাসীদের পাঠানো টাকায় বদলে গেছে গ্রামগুলোর চেহারা। কিন্তু করোনাকালে প্রবাসীরা বেকার হয়ে পড়ায় গ্রামের মানুষের মুখ মলিন হয়ে পড়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো টাকায় নির্মিত ওইসব গ্রামের বাড়িগুলো ঘুরলে অজানা আশঙ্কায় সুনসান নীরবতা চোখে পড়ে।
সৌদি আরব, কুয়েত, আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমানের মতো দেশগুলোতে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে প্রায় সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য। এখনো স্বস্তি ফেরেনি। ব্যস্ত শহরগুলোতে নীরবতা বিরাজ করছে। দিনের বেলা নগর জেগে উঠলেও বন্ধ প্রায় প্রতিটি কর্মক্ষেত্র। এমন অবস্থায় আর্থিকভাবে সংকটে পড়ছেন প্রবাসীরা। একদিকে যেমন দিন কাটছে আতঙ্কে, অন্যদিকে ঘরে বন্দি থাকায় বাড়ছে দুশ্চিন্তা। অসহায় হয়ে পড়েছেন প্রবাসী শ্রমজীবী মানুষ। অনেকেই আছেন চাকরি হারানোর ভয়ে। কাজ বন্ধ হওয়ার কারণে রোজগারও বন্ধ। ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান মাসিক বেতন কমিয়ে অর্ধেক করেছে। কেউ কেউ বিনা বেতনে ছুটি দিয়েছে কর্মীদের। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার বেতনও দিতে পারেনি। অনেকে দেশে গিয়েও আর ফিরতে পারেননি। কয়েক লাখ টাকা খরচ করে এসব প্রবাসীর কেউ গিয়েছেন নতুন ভিসায়, যাদের প্রতি মাসে ধারদেনা শোধ করতে হয়। একদিকে যেমন নিজে চলতে হয়, অন্যদিকে পরিবার চালাতে হয়। বিদেশে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয় প্রতিনিয়ত। আর মাস শেষে যখন বেতনের টাকাগুলো হাতে আসে, তখন চোখ-মুখের ক্লান্তির ছাপ চলে যায় নিমিষেই। কিন্তু হঠাৎ করোনার উত্তাপ সব হিসাব বদলে দিয়েছে।