শিক্ষার্থীরা স্কুলের বেতন হিসেবে দেয় প্লাস্টিক বর্জ্য
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
অনলাইন ডেস্ক : প্রতি সকালে শিক্ষার্থীরা প্লাস্টিক বর্জ্যের একটি ব্যাগ হাতে নিয়ে বিদ্যালয়ে যায়। আর এ প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়েই তাদের পাঠদান করা হয়। মাজিন মুখতার ও তার স্ত্রী পারমিতা সারমার প্রতিষ্ঠিত এই সাক্ষরতা বিদ্যালয় ব্যবহৃত প্লাস্টিক পোড়ানো বন্ধের বিনিময়ে বিদ্যালয়ের ফি মওকুফ করে শিক্ষার্থীদের পরিবেশ যোদ্ধায় পরিণত করেছে।
ভারতের আসাম রাজ্যের পামোহি গ্রামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল মূলত স্থানীয় শিশুদের পাঠদানের উদ্দেশ্যে। গ্রামটির বেশিরভাগ শিশু স্থানীয় পাথর কোয়ারিতে কাজ করে প্রতিদিন প্রায় ৩ ডলার উপার্জন করতো। এজন্য খুব কম সংখ্যক বাবা-মা তাদের পরিবারের একজন উপার্জনক্ষম সদস্যকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে আগ্রহী ছিলেন।
মুখতার বলেন, আমরা যখন বাবা-মাকে স্কুলবাসে তাদের শিশুদের সঙ্গে পরিবারের ব্যবহৃত প্লাস্টিকগুলোও পাঠাতে বলি, তখন কেউ এটি অনুসরণ করেনি। তারা বাড়িতে প্লাস্টিক পোড়াতে পছন্দ করে। তাই আমার স্ত্রী বললো, আমরা স্কুল ফি নেয়া শুরু করবো। এক্ষেত্রে নগদ অর্থ কিংবা প্লাস্টিক বর্জ্যের মাধ্যমে এই স্কুল ফি পরিশোধ করা যাবে।
এরপরই চিত্র পাল্টে যেতে শুরু করে। স্কুল ফির বিকল্প নীতিটির ফলে পরিবারগুলোতে প্লাস্টিক জ্বালানো বন্ধ হয়ে যায় এবং তারা প্লাস্টিক জ্বালানো বন্ধ করার প্রতিশ্রুতিতে স্বাক্ষর করেন।
সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্ধন আরো দৃঢ় করতে বিদ্যালয়টি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণও দেয়। শিক্ষার্থীরা কীভাবে সৌর প্যানেল স্থাপন করতে পারে এবং শিপিং ও ইলেকট্রনিক্স ওয়ার্কশপে অংশ নিতে পারে- তা শেখানো হয়।
আফ্রিকান-আমেরিকান মুখতার আসামের একটি স্কুল প্রকল্পে কাজ করতে ২০১৩ সালে নিউইয়র্ক থেকে ভারতে এসেছিলেন। এরপর গোয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্রী সারমার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২০১৬ সালে এই দম্পতি সাক্ষরতা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়টি পরিচালনার জন্য তারা দাতব্যসংস্থা থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন।
২০ জন শিক্ষার্থী দিয়ে কার্যক্রম শুরু হওয়া সাক্ষরতা স্কুলটিতে এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা ১১০। ৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী এ শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য ৭ জন শিক্ষক আছেন।
সারমা বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের আশেপাশের দায়িত্ব নেয়ার এবং তাদের উন্নতির প্রচেষ্টার বিষয়গুলো শেখানোর চেষ্টা করি। আমরা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর থেকে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২৫ ইউনিট প্লাস্টিক সংগ্রহ করি। এর মাধ্যমে আমরা প্রতি মাসে ১০ হাজারেরও বেশি প্লাস্টিক টুকরা সংগ্রহ করতে সক্ষম হই। এগুলো পরিবেশবান্ধব ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এরপরই প্লাস্টিক পোড়ানো অনেকখানি কমে গেছে। যেখানে আগে প্লাস্টিক পোড়ানো ধোঁয়ার মেঘে প্রায়শই বিদ্যালয় এলাকা ঢেকে যেতো।
এর মধ্য দিয়ে শিশুশ্রম নিরসনের একটি অনন্য উপায়ও তৈরি হয়েছে। মুখতার বলেন, আমরা পাথর কোয়ারির মতো টাকা দিতে পারি না। এজন্য পিয়ার-টু-পিয়ার লার্নিং মডেল তৈরি করেছি। এর মাধ্যমে একটু বেশি বয়সী শিশুরা তাদের চেয়ে কম বয়সীদের শেখায় এবং তার বিনিময়ে তারা খেলনা ও টাকা পায়। এই অর্থ দিয়ে তারা স্থানীয় দোকানে স্ন্যাকস, পোশাক, খেলনা ও জুতার মতো জিনিসগুলো কিনতে পারে। শিক্ষার্থীরা অ্যাকাডেমিকভাবে অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তাদের বেতনও বাড়তে থাকে। আমাদের উদ্দেশ্য হলো বেশি আয় করা শেখানো। এই আর্থিক প্রণোদনা সম্প্রদায়ের জন্য একটি শক্তিশালী প্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয় থেকে কোনো শিক্ষার্থী ঝরে পড়েনি। কাজের বরাদ্দের ওপর নির্ভর করে বড় শিশুরা মাসিক প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে সক্ষম হয়। এমনকি অনেকে তাদের উপার্জন দিয়ে সেলফোনও কিনেছেন।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব যখন তীব্র ছিল তখন বাইরে পিপিই পরে ক্লাস অনুষ্ঠিত হতো। আর লকডাউনে বিদ্যালয়টি ত্রাণ কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়। বয়সে কিছুটা বড় শিক্ষার্থীরা স্থানীয় চাহিদা চিহ্নিত করেছিল এবং এর মাধ্যমে গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ খাওয়াতে তারা সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করেছিল।
বিদ্যালয়টির শিক্ষক আকানশা দুরাহ বলেন, শিক্ষার্থীরা এখন আরো সচেতন। তারা জানে প্লাস্টিক তাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তারা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে এই ক্ষতিকর প্রভাবগুলো নিয়ে আলোচনা করে। তারা আশেপাশের মানুষকে সচেতন করে তুলছে।
বিদ্যালয়টি নিয়ে আসামের শিক্ষা বিভাগের প্রধান সচিব বি কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, সাক্ষরতা মডেল প্রমাণ করেছে, পরিবেশগত শিক্ষা কার্যকরী হতে পারে। অক্ষর বিদ্যালয় আসামের শিক্ষা বিভাগের প্রচেষ্টার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হতে পারে। এটি সমস্ত বিদ্যালয়ের অনুসরণ করা উচিত। তারা সামগ্রিকভাবে সমাজে সচেতনতা তৈরি করছে, যা আমাদের জলবায়ুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অর্থবহ অবদান রাখবে।