মামলার আসামিরাই ‘অপহৃত’ যুবককে খুঁজে দিলেন
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
জমি বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে অপহরণ মামলা দিয়ে ৯ বছর নিজ সন্তানকে লুকিয়ে রেখেছিলেন বাবা-মা। অপহরণ না করেও এ মামলায় কারাভোগ করতে হয় আসামিদের। দীর্ঘদিন মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ। চারজন তদন্ত কর্মকর্তা বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়েও অপহৃত রাসেল মৃধাকে উদ্ধার করতে পারেনি। তবে ৯ বছর পর আসামিরা তাকে খুঁজে বের করেন।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) মামলার আসামিরা জানতে পারেন রাসেল ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন। অবশেষে স্থানীয়দের সহায়তায় সেখান থেকে রাসেলকে উদ্ধার করে মঙ্গলবার দুপুরে বরিশালের গৌরনদী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
উদ্ধার হওয়া রাসেল গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের কলাবাড়িয়া গ্রামের জালাল মৃধা ও মরিয়ম আক্তার দম্পতির সন্তান।
পুলিশ জানায়, ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মরিয়ম আক্তার বাদী হয়ে তার সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে রাসেলকে (১৪) অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন। আদালত পুলিশকে ঘটনা তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। মামলায় উপজেলার বাসুদেবপাড়া গ্রামের এস রহমান মৃধা, তার ছেলে আরমান মৃধা, রায়হান মৃধা, একই এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান মল্লিক, শাহিন মল্লিক, আব্দুল হক ভূঁইয়াসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়।
অপহরণ মামলার আসামি এস রহমান মৃধা জানান, জালাল মৃধার সঙ্গে তার পূর্ব বিরোধ ছিল। এ কারণে জালাল মৃধা তার ছেলে রাসেলকে ঢাকায় লুকিয়ে রেখে হয়রানি করতে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করান। মামলাটি চারজন পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত করেন। সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন গৌরনদীর সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফোরকান হাওলাদার বাদীপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা মো. ফোরকান হাওলাদারকে আমরা বার বার বলেছি। রাসেলকে অপহরণের ঘটনা সম্পূর্ণ সাজানো। বাদী মরিয়ম আক্তার ও তার স্বামী জালাল মৃধা নিজ ছেলেকে লুকিয়ে রেখে মামলাটি করেছেন শুধুমাত্র আমাদের হয়রানি করার জন্য। তবে আমাদের কথায় তদন্ত কর্মকর্তা মো. ফোরকান হাওলাদার কর্ণপাত করেননি। তারা রাসেলকে উদ্ধারে কোনো চেষ্টাও করেননি।
এস রহমান মৃধা জানান, চার্জশিট দেয়ার কারণে অপরাধ না করেও আমি ও আমার ছেলে আরমান মৃধা, শাহজাহান মল্লিক এবং আব্দুল হক ভূঁইয়াকে প্রায় দুই মাস জেল খাটতে হয়েছে। তবে আমরা হাল ছাড়িনি। নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে আমরা রাসেলকে খুঁজতে থাকি। দীর্ঘ ৯ বছর আমরা রাসেলের সন্ধান করেছি। অবশেষে আমরা জানতে পারি রাসেল ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন। আমরা তার সঙ্গে দেখা করি।
বাবা-মায়ের কথা মতো তিনি ৯ বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। কখনো বোনের বাসায়, কখনো স্বজনদের বাসায় আবার কখনো আবাসিক হোটেলে থেকেছেন রাসেল। কয়েক বছর গার্মেন্টসে ও হোটেলে চাকরি করেছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বাড়িতে যেতে নিষেধ করতেন। এ কারণে রাসেল ৯ বছরে একবারও বাড়িতে যাননি বলে আমাদের জানান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. ফোরকান হাওলাদার জানান, রাসেলকে উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। আমার আগে আরও তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত করেছিলেন। তারাও রাসেলের সন্ধান পেতে ব্যর্থ হন। বাদী ও সাক্ষীদের কাছে মামলা তদন্তের নানা সময়ে রাসেলের বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছিলো। তারা একই কথা বলেছেন, রাসেলকে আসামিরা মিলে অপহরণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আর্থিক সুবিধা নিয়ে চার্জশিট দাখিলের বিষয়ে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আ. রব হাওলাদার জানান, রাসেল মৃধা বর্তমানে গৌরনদী থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, রাসেল অপহরণ মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছিল তারাই রাসেলকে খুঁজে পেয়েছেন। পরে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাসেলকে উদ্ধার বা মামলা তদন্তে গাফিলতি ছিল কী-না তা খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।