প্রধান সংবাদবরিশাল বিভাগের সংবাদ

ইলিশ শিকার করছে মৌসুমী জেলেরা

স্টাফ রিপোর্টার : ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরুর সময় থেকে বরিশাল বিভাগে মৎস্য বিভাগের নেতৃত্বে অভিযানে আটককৃতরা বেশিরভাগই মৌসুমী জেলে। এরা নিষেধাজ্ঞার সময়তেই ইলিশ শিকার করে থাকে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। ওই সূত্রটি আরো জানায়, নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ শিকারী জেলেরা নদীতে না থাকলেও সেই জায়গা দখল করে কয়েক হাজার মৌসুমী জেলে। মূলত দাদনদাররা তাদের নিজেদের লোক দিয়ে প্রজনন মৌসুমে এই ইলিশ শিকার করে থাকেন এবং গভীর রাতে বরিশালের বিভিন্ন চরাঞ্চলে বসে কেনা বেচা করা হয় ইলিশ। ইতিমধ্যে বরিশাল বিভাগে তিন শতাধিক জেলেকে কারাদন্ডাদেশ দিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
এদিকে সরেজমিনে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী এলাকায় দেখা গেছে, ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশুদের দিয়ে জাল ফেলে বসে আছে। নিষেধাজ্ঞায় জাল ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে নৌকায় থাকা শিশুরা জানায়, বাড়িতে খাবার নেই, তাই মাছ শিকারে নেমেছে। অপর নৌকাতে চার জন প্রাপ্তবয়স্ক জাল ফেলে বসে আছে। হঠাৎ নদীতে অভিযানকারী দল আসছে এমন সংবাদে তড়িঘড়ি করে জাল টানতে শুরু করলে দেখা যায়, বেশ কিছু মা-ইলিশ ধরা পড়েছে জালে।
মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৪ অক্টোবর থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ৭৭০টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫০টি মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এবং মোট অভিযানের অনুক‚লে ৩৬৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া অভিযানে আটককৃতদের কাছ থেকে ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৩৩৬ জনকে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ২৮ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল ও ৩ দশমিক ৫ মেট্রিকটন ইলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রভাবশালী দাদনদাররা মৌসুমি জেলেদের নামিয়ে দিয়ে মা-ইলিশ নিধনে বাধ্য করছে। হিজলা উপজেলার মেঘনা নদীর হরিণাথপুর, শাওরা সৈয়দখালী, চরকিলøা, অন্তর্বাম, দেবুয়া, কাইতমা, ধুলখোলা, আবুপুর, গঙ্গাপুর, নাছোকাঠীতে মা-ইলিশ নিধনকালে জেলেরা অভিযানকারী দলের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা চালাচ্ছে।
এর আগে মেহেন্দীগঞ্জের মেঘনায় নৌপুলিশের দুটি টিমের ওপর হামলা ও হিজলায় পুলিশের ওপর হামলায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন জানান, রবিবার মেহেন্দীগঞ্জ সদর এবং জাঙ্গালিয়ার রুকুন্দিতে দুটি টিমের ওপর হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি নিজেও ধাওয়ার শিকার হয়েছেন। অপর টিমে থাকা পুলিশের ওপর জেলেরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। তিনি জানান, নদীতে পর্যাপ্ত মা-ইলিশ রয়েছে। মেঘনায় শিশুদের নামিয়ে মা-ইলিশ শিকার করানো হচ্ছে। শিশুদের দন্ড দিতে না পারায় তারা বিপাকে পড়ছেন।
গত সাত দিন এখানকার বিভিন্ন নদীতে টানা অভিযান পরিচালনাকারী দলের নেতৃত্বদানকারী মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস জানান, অমাবস্যায় সামান্য ডিম ছাড়লেও আগামী ২৮ ও ২৯ অক্টোবর পূর্ণিমাতে মা-ইলিশ পূর্ণ ডিম ছাড়বে। এ সময় ভাসানচর, বাগরজা, লেংগুটিয়া পয়েন্ট, দড়ির চর, খাজুরিয়া, মাসকাটা নদী, তেঁতুলিয়া, মেঘনা, কীর্তনখোলার বেলতলা, চরবাড়িয়া, চরমোনাই পয়েন্ট, দপদপিয়া কালিজিরা পয়েন্টে জাল ফেললেই প্রচুর মা-ইলিশ ধরা পড়ে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছর মা-ইলিশ রক্ষায় বেশি অভিযান পরিচালিত হলেও জেলেদের হাত থেকে মা-ইলিশ রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে সকলেই।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আনিচুর রহমান জানান, মা-ইলিশ রক্ষায় দিন-রাত অভিযান চললেও থামানো যাচ্ছে না এসব জেলেদের। অভিযানে জেলেদের জাল-নৌকা আটক এবং জেল-জরিমানার মতো শা¯িÍমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও থামছে না জেলেদের ইলিশ শিকার। উলটো প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অভিযান পরিচালনাকারী দলের ওপর জেলেদের পক্ষ থেকে হামলার মতো ঘটনা ঘটছে।
উলেøখ্য, ইলিশের প্রজনন মৌসুমের কারনে ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ শিকারে নিষোধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।

আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন

Back to top button