পুরোনো সরঞ্জাম :বরিশালে যখন-তখন বিদ্যুৎ বিভ্রাট
পুরোনো সরঞ্জাম :বরিশালে যখন-তখন বিদ্যুৎ বিভ্রাট
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
স্টাফ রিপোর্টার : পিক কিংবা অফপিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ থাকলেও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের সেবা মিলছে না। বেশ কিছুদিন নগরসংলগ্ন কাশিপুর থেকে রুপাতলী পর্যন্ত ৩৩ কেভি নতুন লাইন সংযোজনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। পাশাপাশি ধারণক্ষমতার অধিক বিদ্যুত্ প্রবাহিত হওয়ায় বৈদ্যুতিক কেব্লসহ সরঞ্জাম বিকল হচ্ছে। এতে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন এখানকার বিদ্যুতের সাড়ে ৬ লক্ষাধিক গ্রাহক। বিদ্যুত্ বিভাগের কাছে পর্যাপ্ত ট্রান্সফরমার থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তা বসানো যাচ্ছে না। তাই যে কোনো সময়ে বড় ধরনের বিদুত্ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরবরাহ থাকলেও তীব্র গরমে অন্ধকারে থাকতে হয় নগরবাসীকে। পুরোনো সরঞ্জামের কারণে বর্ষা মৌসুমে বিগত বছরের ন্যায় বিদ্যুত্ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে ভুক্তভোগীরা।
গত কয়েক দিন ধরে মহানগরীর মার্কেট, দোকানসহ সরকারি-বেসরকারি অফিস চালু হওয়ায় বিদ্যুত্ ভোগান্তিতে বেকায়দায় পড়েছে সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল। আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বেচাবিক্রি বাড়লেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ না পাওয়ায় আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিপাত চলতে থাকায় দিনের বেলাতেই ঘণ্টায় চার থেকে পাঁচ বার লোডশেডিং হচ্ছে। এত বিদ্যুিবভ্রাট হলেও লোডশেডিং মানতে নারাজ বিদ্যুত্ বিভাগ। বিদ্যুত্ বিতরণ বিভাগ গতকাল জানিয়েছে, এ অঞ্চলে চাহিদা ১২০ মেগাওয়াটের অনুকূলে সমপরিমাণ বিদ্যুত্ সরবরাহ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশাল বিদ্যুতের একাধিক ফিডারের দায়িত্বরতরা জানান, বর্তমানে মাটির নিচ দিয়ে লাইন স্থাপনের সার্ভে কাজ চলায় বিদ্যুত্ বিভাগ বড় ধরনের কোনো সংস্কার করছে না। তাই দিনে দিনে সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে কয়েক বছর লেগে যাবে; অথচ বর্তমানে কাজ করতে হচ্ছে জোড়াতালি দিয়ে। নতুন উন্নত মানের সরঞ্জাম না আসায় দিন-রাত সমানতালে কাজ করেও গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে জানান তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুত্ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ঘনবসতি ও বহুতল ভবনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন সংযোগ দিতে হচ্ছে। এতে পূর্বের ধারণক্ষমতার চাইতে বেশি ধারণক্ষমতার সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হচ্ছে। এছাড়া বজ্রপাতে প্রায়ই বিদ্যুত্ বিভাগের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, বাণিজ্যিক এলাকাসহ বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু ট্রান্সফরমার বসাতে গেলে এলাকাবাসীর বাধার মুখে ফিরে আসতে হচ্ছে। নানান ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ ব্যবহারের কারণে ধারণক্ষমতার বেশি বিদ্যুত্ ট্রান্সফরমার ও বৈদ্যুতিক লাইনে প্রবাহিত হওয়ায় ঘন ঘন বিদ্যুত্ বিপর্যয় হচ্ছে। সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ট্রান্সফরমার বসাতে না পারায় অতিরিক্ত সংযোগের এই বাড়তি লোড থেকেই যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যুত্ বিতরণ ও বিক্রয় ডিভিশন-১ ও ২ জোনের অধীনে পাঁচ শতাধিক ট্রান্সফরমার রয়েছে, যার গ্রাহকসংখ্যা ১ লাখের ওপরে।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অমূল্য কুমার সরকার জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিং না থাকলেও বিভিন্ন সময়ে সংস্কার করতে সংযোগ বন্ধ রাখা হয়। এসব ভোগান্তি থেকে উত্তোরণের জন্য মাটির নিচ থেকে বিদ্যুতের লাইন স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২১ সালে তিন বছর মেয়াদি ঐ প্রকল্প শেষ হলে বিদ্যুতের তেমন সমস্যা থাকবে না। ট্রান্সফরমার বসানোতে বাধার বিষয়ে তিনি জানান, কিছু কিছু এলাকায় সমস্যার সৃষ্টি হলে তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সমাধান করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বরিশাল জেলার সদর উপজেলাসহ ১০টি উপজেলাকে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করে পল্লী বিদ্যুত্ সমিতি-১ ও ২ বিদ্যুত্ সরবরাহ করছে। তাদের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ লাখ। ট্রান্সফরমার রয়েছে প্রায় ১৮ হাজার। পল্লী বিদ্যুত্ সমিতির সরবরাহ লাইন মাইলের পর মাইল গ্রামের গাছপালার ওপর দিয়ে টানা হয়েছে। সামান্য বাতাস শুরু হলেই পুরো পল্লী বিদ্যুত্ সরবারহ লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঝুঁকিপূর্ণ ট্রান্সফরমার আর লাইনের কারণে পরবর্তী সময়ে আবার পুরোটা লাইন অনুসন্ধান করে ত্রুটিমুক্ত করার পরই সরবরাহ স্বাভাবিক হয়, যে কারণে একবার সরবরাহ বন্ধ হলে পুনরায় বিদ্যুত্ পেতে এক দিন পার হয়ে যায়।
পল্লী বিদ্যুত্ সমিতির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুত্ সরবরাহ করতে অনেক সময় যে খুঁটি ব্যবহার করা হয়, তাতে ঝড় কিংবা বৃষ্টিপাতে গাছের ডালপালা পড়ে গিয়ে বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য প্রায়ই এলাকার লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে গাছপালা কেটে দেওয়া হচ্ছে।