হিজলায় একসঙ্গে ৩ সন্তানের জন্ম, বাঁচানো গেল না
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
স্টাফ রিপোর্টার : বরিশালের হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচার ছাড়াই একসঙ্গে তিনটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এক গৃহবধূ। তিনটি ছেলেসন্তান প্রসব করেন সেলিনা বেগম (২৮) নামের ওই গৃহবধূ। কিন্তু জন্মের সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর একে একে মারা যায় তিন সন্তান। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই তিন নবজাতক মারা যায়।
ওই তিন নবজাতকের মায়ের নাম সেলিনা বেগম ও বাবার নাম ফারুক ব্যাপারী। তাঁদের বাড়ি হিজলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কালিকাপুর গ্রামে।
হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, শনিবার বিকেল চারটার দিকে ১০ মিনিটের ব্যবধানে তিন ছেলেসন্তান জন্ম দেন সেলিনা বেগম। এরপর শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ১০ মিনিটের ব্যবধানে একে একে মারা যায় তিন নবজাতক। এরপর রোববার বেলা ১১টার দিকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তিন নবজাতককে।
হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহরাজ হায়াত জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জন্ম নেওয়া তিন নবজাতকের প্রত্যেকের ওজন ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কম। তা ছাড়া তাদের শ্বাসকষ্ট ছিল। যে কারণে জন্মের পরপরই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের বরিশালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে তাদের মা আশঙ্কামুক্ত ছিলেন।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক উত্তম কুমার সাহা জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই তিন নবজাতককে শিশু ওয়ার্ডে তাদের স্বজনেরা ভর্তি করেন। এ সময় নবজাতকদের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। ভর্তি করা প্রথম শিশুর ওজন ১ কেজি ১৪৫ গ্রাম, দ্বিতীয় শিশুর ১ কেজি ৪৫ গ্রাম এবং তৃতীয় শিশুটির ওজন ছিল ১ কেজি ৯০ গ্রাম।
শিশু মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক উত্তম কুমার সাহা বলেন, কম ওজন ও অপরিণত বয়সে ভূমিষ্ঠ হওয়ায় শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার সক্ষমতা কম এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ছিল না বলেই তাদের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। তবে শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসক ও নার্সরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেন তিন নবজাতককে বাঁচানোর। কিন্তু রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১১টা ৪০ মিনিটের মধ্যে ওই তিন নবজাতক একে একে মারা যায়। যদি জন্মের পরপরই তাদের ভেন্টিলেটরের মধ্যে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হতো, তাহলে হয়তো তাদের বাঁচানো সম্ভব হতো।
স্বজনেরা জানান, সেলিনা বেগম আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। শনিবার বেলা দুইটার দিকে তাঁর প্রসববেদনা ওঠে। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে প্রথমে হিজলা উপজেলা সদর রেমেডি নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যান। কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে দ্রুত তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে দরিদ্র হওয়ায় তাঁরা সেলিনাকে হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
হিজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শনিবার বেলা চারটার দিকে প্রথম সন্তান জন্ম দেন সেলিনা। এরপর ৫ মিনিটের ব্যবধানে দ্বিতীয় এবং ১০ মিনিটের ব্যবধানে তৃতীয় সন্তান জন্ম দেন।
জন্মের পরপরই চিকিৎসকেরা উন্নত চিকিৎসার জন্য নবজাতকদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু বরিশালে নেওয়ার জন্য অর্থের জোগাড় করতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা তিন নবজাতককে নিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান। সেখানে সাড়ে ১১টার দিকে ১০ মিনিটের ব্যবধানে একে একে তিন নবজাতকের মৃত্যু হয়। সকালে তিন নবজাতকের লাশ গ্রামে নিয়ে এসে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।