রাজনীতির সংবাদ
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
আমরা চাই অখন্ড স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম : বাংলাদেশ সময় গত ২০ মে বৃহস্পতিবার রাত ২টার পর থেকে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধা হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। সত্যি সত্যিই যদি এটা কার্যকরী হয় তবে সকলের জন্যই একটা বড় স্বস্তির বিষয়।
অনেক বিশ্লেষকের কাছে আপাতঃ দৃষ্টিতে এটা জায়নবাদী অবৈধ দখলদার সন্ত্রাসী ইসরাইলের পরাজয় এবং নির্যাতিত অসহায় ফিলিস্তিনিদের বিজয়। কারণ গত ১০ মে থেকে শুরু এ বর্বরোচিত আগ্ৰাসনে ফিলিস্তিনিদের ক্ষয়-ক্ষতি অপূরণীয়। এতে ৬৫/৬৭ নিষ্পাপ শিশু সহ শাহাদাত বরণ করেছে পৌনে তিনশত ফিলিস্তিনী। মূহুর্মুহ বোমা বর্ষণে বিধ্বস্ত হয়েছে সাধারণ মানুষের আবাসিক এলাকা, বাড়ি-ঘর, স্থাপনা এমনকি সংবাদ মাধ্যমগুলোর অফিস বিল্ডিংসমূহ। তার পরেও এটা ফিলিস্তিনিদের একপ্রকার বিজয়।
ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের পরাশক্তি। আটচল্লিশ, সাতষট্টি সহ সবকটি যুদ্ধেই সে সম্মিলিত আরব বাহিনীকে পর্যুদস্তু করে দিয়েছে। সে তার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম নিয়ে এতটা আত্মবিশ্বাসী যে, কোন পাখিও নাকি তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইসরাইলে প্রবেশ করতে পারবে না। ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ যোদ্ধা হামাসের অকল্পনীয় লাগাতার রকেট হামলা তার এতদিনের সে অহংকারকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। আয়রন ডোমের চোখকে ফাঁকি দিয়ে হামাসের রকেট আঘাত হেনেছে খোদ রাজধানী তেল আবিবে। মারা গেছে ১২/১৩ জন ইসরাইলী নাগরিক।
এতে ইসরাইলের শত্রুপক্ষ সহ গোটা বিশ্বের কাছে তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতার বিষয়টি ধরা পড়েছে। আভ্যন্তরীণভাবে ভীষণ চাপে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। কারণ সকল স্তরের ইসরাইলীদের একটা সাধারণ মনোভাব এমন যে ,আরবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাও করো, তাদের মারতে চাও মেরে ফেল আপত্তি নেই কিন্তু তার খেসারত আমরা দিব না। আমাদের জীবনের, জান-মালের ওপর হুমকি আসলে সে যুদ্ধ তোমাকে বন্ধ করতে হবে। খোদ ইসরাইলের ভিতরে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। দেশের ভেতরে নেতানিয়াহু অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এটাও তার একধরনের একটা পরাজয়।
অপরদিকে, হামাসের সামরিক ব্রিগেড সহ ফিলিস্তিনের সকল প্রতিরোধ ইউনিটকে ধ্বংস করার যে ঘোষণা ইসরাইল দিয়েছিল সেক্ষেত্রেও সে সফল হয়নি। দু একজন কমান্ডারকে হারানো ছাড়া হামাস বহাল তবিয়তেই আছে এবং সে হামাসের সাথেই যুদ্ববিরতির আপোষ করতে বাধ্য হচ্ছে। এটা আঞ্চলিক সুপার পাওয়ার পারমাণবিক শক্তির অধিকারী ইসরাইলের জন্যে কিছুটা বিব্রতকর।
এর সাথে যেহেতু ফিলিস্তিনীরা নিষ্ঠুর হামলার শিকার ,আগ্ৰাসণের মুখে কোনমতে আত্মরক্ষা করেছে তাই তাদের প্রতি বিশ্বব্যাপী সহানুভূতি আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। এসব সমীকরণের পরেও আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়নে এখন আত্মতৃপ্তির কোন সুযোগ নেই। কারণ এটা দীর্ঘ মেয়াদে কোন সুফল বয়ে আনবে না। কোনমতে আত্মরক্ষা করে ফিলিস্তিনি ভাইয়েরা তাচ্ছিল্যের জীবন নিয়ে বেঁচে থাকুক এটা আমাদের প্রত্যাশা নয়। আমরা চাই অখন্ড স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। যেখানে নিজ বসতি থেকে বিতাড়িত সকল ফিলিস্তিনীরা আপন ভিটায় স্থায়ীভাবে সন্মানের সাথে বসবাস করতে পারবে। তাদের নিজস্ব তাহজীব-তমুদ্দুন লালন, মানবীয় মূল্যবোধ, মৌলিক অধিকার, নাগরিক সুবিধা সহ সকল প্রকার অধিকার ভোগ করতে পারবে।
আমরা জানি, এটা বলা যত সহজ, ভাবা যত সহজ, প্রত্যাশা যত সহজ, প্রাপ্তি কিন্তু অনেক অনেক কঠিন। হাজার বছরের ইতিহাস তার সাক্ষী। মুসলিম শক্তিগুলো আজ শতধা বিভক্ত। প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব পেট্রো, ডলার আর তৈল শক্তিতে শক্তিশালী।যুদ্ধাস্ত্রেও কম শক্তিশালী নয়; কিন্তু সে আমেরিকাকে অসন্তুষ্ট করে নিজের রাজতান্ত্রিক ক্ষমতাকে ঝুঁকিতে ফেলতে চায় না।
ফিলিস্তিনের সীমান্তবর্তী দেশ জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন মিশরের সম্মিলিত সামরিক শক্তি কম নয়; কিন্তু তাদের সে সব অস্ত্রের অধিকাংশই আমেরিকা থেকে কেনা। এগুলো তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহারের অনুমতি আছে, তবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাক করারও অনুমতি নাই। অন্যদিকে ইরান বেশ শক্তিশালী। তার নিজস্ব কিছু পলিসি আছে। সুন্নী অধ্যুসিত গাজা এবং হামাসের ব্যাপারে সে অনেকটা নিষ্প্রিহ। তুরস্ক প্রায় দেড় হাজার মাইল দূরে। সদিচ্ছা থাকলেও তার পক্ষে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সহযোগিতা ছাড়া একা কিছু করা সম্ভব নয়।
এসব নানা সমীকরণ সত্যেও নিরাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেয়া যাবেনা। নব উদ্যমে উম্মাহর সকল শক্তি, সকল মেধা, সব সৃজনশীলতা ঐক্যবদ্ধভাবে একযোগে কাজে লাগাতে হবে। ফিলিস্তিন যে আমাদের; আমার ভাই-বোনেরাই যে এর প্রকৃত মালিক; তাদেরকে যে এখান থেকে জোর করে উৎখাত করা হয়েছে তা বিশ্ব ফোরামে ঐতিহাসিক অকাট্য সব ডকুমেন্টস সহ উপস্থাপন করতে হবে। সম্ভাব্য সবশক্তি ও কৌশল অবলম্বন করে চাপ প্রয়োগ করতে হবে বিশ্ব মোড়লদের ওপর। চলবে ( লেখক: উপাধ্যক্ষমাওলানা মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম , কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল জেলা সেক্রেটারি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ)