নৌযানে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
ঈদুল আজহার আগের দিন শুক্রবার (৩১ জুলাই) সকালে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে মাস্কের সঠিক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি অর্ধেকের বেশি যাত্রীকে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে করোনা ঝুঁকি নিয়েই বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন জনগণ। আর ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ থাকায় শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে। এদিকে বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) গার্মেন্টসগুলোতে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় ওই দিন দুপুরের পর থেকে লঞ্চযাত্রীদের চাপ বেড়ে গেছে। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত এ চাপ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতে মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রীবহন করছে লঞ্চগুলো। লঞ্চের ছাদেও যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। কিছু লঞ্চের প্রবেশ পথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে দিলেও অনেকেই তা মানছেন না। বেশিরভাগ যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। অনেককে আবার নাক-মুখ না ঢেকে থুতনি বা কানের সঙ্গে মাস্ক ঝুলিয়ে রাখতে দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার লঞ্চের প্রবেশ পথে মাস্ক পরলেও পরে খুলে ফেলছেন। লঞ্চের ডেকের যাত্রীদের গাদাগাদি করে বসে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ থাকায় সদরঘাটের প্রবেশ মুখে বসানো জীবাণুনাশক টানেলটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সদরঘাট টার্মিনালের পন্টুনে তিল পরিমাণ জায়গাও ফাঁকা নেই। ফলে টার্মিনালের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব কোনোভাবেই বজায় রাখা যাচ্ছে না। বেশিরভাগেরই মাস্ক থাকলেও সেটি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচল নিশ্চিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মানতে যাত্রী, লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে তারা। বিআইডব্লিউটিএ বারবার শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল ও মাস্ক না পড়লে লঞ্চে না উঠতে দেওয়ার জন্য মাইকিং করলেও তা মানতে দেখা যায়নি যাত্রীদের।এদিকে দূরপাল্লার লঞ্চ স্বাভাবিক সময়ে সন্ধ্যা থেকে সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে সকাল থেকেই ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুরের উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। ভোরে যেসব যাত্রীর মুখে মাস্ক ছিল না, তাদেরকে সদরঘাটে ঢুকতে বাধা দেওয়া হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের চাপ বাড়ায় সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। একইসঙ্গে জীবাণুনাশক ব্যবহারে যাত্রীদের অনীহা দেখা গেছে। ভোলাগামী গ্রীন লাইন-২ এর এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, এখন কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। আমাদের লঞ্চ ফুল এসি। একটি সিট পর পর যাত্রীদের বসার কথা থাকলেও কোনো সিট ফাঁকা নেই। লঞ্চের সামনে ফাঁকা স্থানেও যাত্রীরা চাদর পেতে বসে আছেন। না করার পরও তারা জোড় করে উঠে পড়ছেন, বলছেন পরিবারের সঙ্গে ঈদ করব, এখন যেতে না পারলে ঈদ করা হবে না। লঞ্চে ওঠার সময় স্যানিটাইজার ব্যবহার ও মাস্ক পরা নিশ্চিত করলেও পরে আর কোনো কিছু লক্ষ্য করা হচ্ছে না। চাঁদপুর রুটের সোনারতরী-৩ লঞ্চের চালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদের কারণে লঞ্চ চলাচলে আমরা সরকারের সব নির্দেশনা মানতে পারছি না। লঞ্চে ওঠার সময় যাত্রীদের স্যানিটাইজার ব্যবহারে বাধ্য করা গেলেও মাস্ক পরা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। যাত্রীরা ওঠার সময় মাস্ক পড়ছেন, কিন্তু লঞ্চে উঠে মাস্ক খুলে ফেলছেন। বারবার বলার পরও মানছেন না। বলতে গেলে চড়াও হন আমাদের ওপর। যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ তাই, লঞ্চের ডেক, কেবিনে তিল পরিমাণ জায়গাও ফাঁকা নেই। এজন্য না করা সত্যেও কিছু যাত্রী ছাদে উঠে গেছেন।
টঙ্গীর একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন এম ভি মানিক-৯ এর যাত্রী রাব্বী হাসান৷ সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবো বলে ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি যাচ্ছি। গত ঈদে বাড়ি যাইনি। ঢাকাতেই ছিলাম। এবার সাধারণ ছুটি বা লকডাউন না থাকায় বাড়ি যাচ্ছি। এজন্য গতকাল রাত থেকে লঞ্চে বসে আছি। লঞ্চ ছাড়বে সকাল ৯টায়। কি করব, রাতে এসেও কোনো কেবিন পাইনি। তাই ডেকে বসে যাচ্ছি৷ এখানে ঠিকমতো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। মাস্ক থাকলেও অনেকেই তা পরছেন না। একজন আরেকজনের গাঁ ঘেঁষে বসে আছেন। একই বিছানায় পাঁচ-ছয়জন বসে আছেন। আসলে ঈদ ও গণপরিবহনে শারীরিক দূরত্ব মানা অনেক কঠিন৷ লঞ্চের লোকজন এসে বার বার বলে যাচ্ছেন, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয় না। যেভাবেই হোক বাড়ি যেতে হবে, এটাই মূল উদ্দেশ্য। এম ভি মানিক-৯ এর ম্যানেজার মো. সেলিম রেজা বলেন, আমরা সরকারের নির্দেশ মতো চলাচল করছি। আমরা আমাদের মতো করে সতর্ক করছি। অনেকেই মানছেন না। যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বললে তারা বলেন, একই পরিবারের লোক, কিছু হবে না। আমাদের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৬০০। এখন নিয়ে যাচ্ছি প্রায় ৭০০ জনের মতো। ঈদতো, তাই যাত্রীদের না করলেও উঠে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে সকালে দূরপাল্লার কোনো লঞ্চ যায় না। ঈদ দেখে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপে যেতে হচ্ছে। আমরা গতকাল রাত ১টায় সদরঘাটে এসেছি, একটু পর ছেড়ে যাব। কিছু করার নেই, সবাই চায় পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবহন পরিদর্শক দীনেশ কুমার সাহা বলেন, আজ যাত্রীদের ভিড় বেশি থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা বার বার মাইকিং করছি, কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। যাত্রীরা সচেতন না হলে হবে না। লঞ্চ টার্মিনালে প্রশাসনের লোকজন প্রতিনিয়ত যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার ও মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, গতকাল আমাদের ১২৪টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে দেশের ৪৪টি নৌরুটে। শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ছেড়ে গেছে ১৬টি লঞ্চ। এর মধ্যে বরিশালে দু’টি ভোলায় দু’টি, চাঁদপুরে চারটি, হাতিয়ায় একটি, লালমোহনে একটি, কালাইয়ায় একটি, মুলাদিতে একটি, বেতুয়ায় একটি ও শরিয়তপুরে চারটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। এসব লঞ্চে আমরা ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী উঠতে দেইনি এবং নির্দিষ্ট সময়ের পরে কাউকে পন্টুনে থাকতে দিচ্ছি না। তারপরও দেখা গেছে, কিছু কিছু লঞ্চে ছাদে যাত্রী উঠেছেন। তবে সেটা ধারণ ক্ষমতার মধ্যেই কিছু যাত্রী ছাদে ঘুরতে গেছেন, সেটাই দেখা গেছে। এদিকে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে যাতায়াত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, লঞ্চ চলাচলে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি গ্রহণ করেছি। বিআইডব্লিউটিএ স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে যাত্রী চলাচলে লিফলেট বিতরণ ও প্রচারণা চালিয়েছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও তাপমাত্রা মাপার যন্ত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইসঙ্গে সদরঘাটের প্রবেশ পথে জীবাণুনাশক টানেল স্থাপন করা হয়েছে। ডেকের যাত্রীদের জন্য যে মার্কিং করে দেওয়া হয়েছে, সেটা মেনে চলতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।