দখল দুষনে মরতে বসেছে বরগুনার খাকদোন নদ
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
বরগুনা প্রতিনিধি : দখলদারদের দৌরাত্ম্যে সংকুচিত হয়ে নৌযান চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বরগুনার খাকদোনা নদ। নদের উভয়পাড়ে তিন কিলোমিটারে মধ্যে শতাধিক স্থায়ী স্থাপনা গড়ে উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, দখলমুক্ত করে খনন না করলেই অচিরেই এই নদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। একই সঙ্গে নদে সংযুক্ত অন্তত ১৫টি খাল প্রবাহ হারাবে।
স্থানীয়রা বলছেন, একসময় নদটি প্রায় এক কিলোমিটার প্রশস্ত ছিল। গত দুই দশকে অব্যাহত দখল ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিষখালী-পায়রা নদীর সংযোগ স্থাপনকারী ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদের ১৫ কিলোমিটার মরা খালে পরিণত হয়েছে। বাকি ৯ কিলোমিটার নদের অস্তিত্ব থাকলেও এর মধ্যে মাত্র ৬ কিলোমিটার কোনোরকম নৌ চলাচলের জন্য সচল রয়েছে।
বরগুনা শহরের ক্রোক থেকে মাছবাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকার উভয়পাড়ে গড়ে উঠেছে শতাধিক স্থাপনা। কেউ কেউ আবার দখল করে বিক্রিও করেছেন। বিআইডব্লিউটিএর তালিকায় এই নদের দুইপাশে ১৫০ অবৈধ দখলদারের নাম রয়েছে। এর মধ্যে সাবেক জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ীও ও রাজনীতিবিদসহ সরকারি কর্মকর্তারাও রয়েছেন।
বরগুনা পৌরশহরের পশ্চিম বরগুনা উপজেলা পরিষদের সামনে খাকদোন নদ ভরাট করে সাবেক পৌর মেয়র ও সদ্য বহিষ্কৃত পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন তিনতলা ভবন তৈরি করেছেন। এর নিচতলায় তার ঠিকাদারি ও ব্যক্তিগত কার্যালয়।
এ ছাড়া তিনি ক্রোক ব্রিজের পশ্চিম পাশেও নদ ভরাট করে তিনতলা একটি ও একতলা টিনশেড ভবন তৈরি করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, ওই জমি তিনি হাসপাতাল তৈরির জন্য ইজারার আবেদন করে দখলে নিয়েছেন। পরে হাসপাতাল না করে নিজের মালিকানায় ভবন তৈরি করে সেখানে রড সিমেন্টের ব্যবসা খুলেছেন। দিয়েছেন দোকান ভাড়া।
বরগুনা জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান (বুড়িরচর ইউনিয়ন) জহিরুল হক পনুর নামও রয়েছে বিআইডব্লিউটি’র দখলদারদের তালিকায়। বরগুনা মাছবাজার এলাকায় তিনি খাকদোন দখল করে বরফকল তৈরি করেছেন। আরও চারটি স্থাপনা দখলে রয়েছে তার।
এ ছাড়াও দখলদারদের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বরগুনা জেলা আওয়াামী লীগের সদস্য আবুল হোসেন তালুকদার, বরগুনা রাইফেল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত মজিবুর রহমান মোল্লা, জেলা বিএনপি সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম মোল্লার মেয়ের জামাতা বাদল খান, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফারুক সিকদার, সাবেক বিএনপি নেতা রুস্তম আজাদ, ব্যবসায়ী জসিম নায়ক, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন (ফুলঝুড়ি ইউনিয়ন) ও মিলন মৃধা নাজিম আলী।
বরগুনা ভূমি অফিসে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মচারীর দখলেও রয়েছে উত্তর পাড়। বরগুনা সদর উপজেলা ভূমি অফিসের প্রধান সহকারী আলী হোসেন, বরগুনা জেলা নাজির মাসুদ করিমের দখলে রয়েছে মাছবাজার ব্রিজের উত্তপাশের লাকুরতলা এলাকায় জমি দখলে রেখেছেন। এর বাইরেও নামে বেনামে দুই শতাধিক দখলদার পাকা স্থাপনা গড়েছেন।
নদ দখলের তালিকায় নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদের সামনে এবং ক্রোক এলাকায় আমার দুটি স্থাপনা রয়েছে। ওই দুটি স্থাপনায় নদের কিছু অংশ ভরাট হয়ে গেছে। আমি দুটি অংশ পরিষ্কার করে রেখেছি। যখন প্রশাসনে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবে, তখন আমি ওই অংশ ছেড়ে দেব।
ব্যবসায়ী নেতা জহিরুল হক পনু বলেন, আমি নদ দখল করিনি। আমার কোনো অবৈধ স্থাপনা নেই। আমার নাম ব্যবহার করে কেউ হয়তো দখল করেছে।
বরগুনা ভূমি অফিসের প্রধান সহকারী আলী হোসেন বলেন, আমি মালিকানার রেকর্ড কিনে বাড়ি করেছি, নদের ভরাট হওয়া কিছু অংশ সেখানে আছে।
ৱজেলা নাজির মাসুদ করিম দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার দখলে কোনো জমি খাকদোন নদের পাড়ে নেই।
৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারুক সিকদার বলেন, আমি নদের জমি দখল করিনি। তবে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশে এক রিকশাচালক কিছু জমি আমার নামে দখল করে ঘর তুলে সেখানে বসবাস করছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, বরগুনা নদীবন্দর সচল রাখতে প্রায় প্রতিবছর সরকার লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে খাকদোন নদের ছয় কিলোমিটার খনন করে। কিন্তু অব্যাহত দখলের কারণে এই অংশের নাব্য ধরে রাখা যাচ্ছে না। এ কারণে নাব্য ও অস্তিত্বসংকটের মুখে পড়েছে ওই অংশও।
এ ছাড়া পাশ দখলের কারণে নদটি সংকুচিত হয়ে পড়ছে। নদের সঙ্গে শাখা খালগুলোর প্রবেশদ্বারে স্লুইসগেট নির্মাণ করায় জোয়ারের প্রবাহ কমে গিয়ে এসব খালও ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে বরগুনা নৌবন্দরের সহকারী পরিচালক মামুন অর রশিদ বলেন, অব্যাহত দখলে নদটি সংকুচিত হওয়ায় এখানে বড় কোনো লঞ্চ ঘুরতে পারে না। এ জন্য এই বন্দরে বড় ও বিলাসবহুল লঞ্চ আসে না। আর বন্দরের সুফলও পাওয়া যাচ্ছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়ছার আলম বলেন, খাকদোন নদের উৎসস্থল থেকে পায়রা নদী পর্যন্ত খনন করা হবে। তাদের একটি সমীক্ষা কমিটি কাজ করছে। ওই কমিটির প্রতিবেদন দিলেই দু-এক মাসের মধ্যে একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে পাউবোর প্রধান কার্যালয়ে জমা দেওয়া হবে।
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণে আমাদের উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করা হয়েছিল। আমরা এখন নির্বাচন শেষ করেছি। যেকোনো সময় নদের দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।