রাজনীতির সংবাদ

আওয়ামী লীগের আধিপত্য, কোন্দলে নাকাল বিএনপি

বরিশালের ৪ পৌরসভা

সুমন চৌধুরী : বরিশাল জেলার ছয়টি পৌরসভার মধ্যে এ পর্যন্ত নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া চার পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের কাছে বিশাল ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা। এমনকি মেহেন্দীগঞ্জ ও বাকেরগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীদের তৃতীয় স্থানে পাঠিয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী। চার পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীদের প্রাপ্ত মোট ভোট হচ্ছে চার হাজার ৮০৪, যা একজন বিজয়ী প্রার্থীর অর্ধেকেরও কম।
বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় প্রার্থীর বড় ব্যবধানে পরাজয়ের জন্য শুধু আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তার নির্বাচনী এককভাবে দায়ী নয়, বিএনপির স্থানীয় কোন্দলও এর নেপথ্যে বড় ভূমিকা ছিল। অনুগত না হলে প্রার্থীর পাশে থাকেন না দলের শীর্ষ নেতা ও তার অনুসারীরা। নেতাকর্মীদের এ অভিযোগের সত্যতা মেলে সর্বশেষ গত শনিবার অনুষ্ঠিত মেহেন্দীগঞ্জ ও গৌরনদী পৌর নির্বাচনে।

এ দুটি উপজেলা বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আওতাধীন। উত্তর জেলার সভাপতি মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ মেহেন্দীগঞ্জের বাসিন্দা ও বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসু গৌরনদীর বাসিন্দা। বিগত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি গৌরনদী-আগৈলঝাড়া নিয়ে গঠিত বরিশাল-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। অথচ এ দুই নেতা ও তাদের অনুসারীরা দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে গত ২৮ ডিসেম্বর সম্পন্ন হওয়া বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আওতাধীন বাকেরগঞ্জ ও উজিরপুর পৌর নির্বাচনে।

নিজ সংসদীয় এলাকার পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কেন প্রচারে যাননি জানতে চাইলে উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ বলেন, ‘একাধিকবার যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সেখানে গেলে হামলা হতে পারে এমন পূর্বাভাস পেয়ে আর যাওয়া হয়নি।’ একই যুক্তি দেখিয়ে মেহেন্দীগঞ্জ লাগোয়া উপজেলা হিজলার বাসিন্দা উত্তর জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম রাজু বলেন, প্রার্থী ও আত্মীয়স্বজনের বাইরের কাউকে নির্বাচনে প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়নি নৌকার কর্মীরা।

মেহেন্দীগঞ্জের মেয়র প্রার্থী জিয়াউদ্দিন সুজন এ প্রসঙ্গে বলেন, জেলার সভাপতি প্রচারে আসতে চেয়েছিলেন, হামলার ভয়ে তাকে আনা হয়নি। উপজেলার শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ এসে ঘুরে গেছেন। বেশিরভাগ নেতাকর্মী ভোট দিতেই যাননি।

গৌরনদী পৌর নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী জহির সাজ্জাদ হান্নানের প্রচারে ছিলেন না উত্তর জেলা ও উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা। গৌরনদীর খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ভোটার ঢাকার বাসিন্দা উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান এ প্রসঙ্গে উল্টো প্রার্থীকে দায়ী করে বলেন, প্রার্থী নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তিনি নিজের বাসায় নির্বাচনী প্রচার অফিস স্থাপন করেছেন। এসব কারণে দলের নেতাকর্মীরা তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।

ঠিক একইভাবে গত ২৮ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বাকেরগঞ্জ পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী এসএম মনিরুজ্জামানের পাশে ছিলেন না উপজেলা সভাপতি ও স্থানীয় সাবেক সংসদ আবুল হোসেন খান এবং তার অনুসারীরা। একই সময়ে অনুষ্ঠিত উজিরপুরের পৌর নির্বাচনেও শহিদুল ইসলাম একাই ছিলেন ভোটের মাঠে।

নির্বাচন নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের এমন অবস্থান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বলেন, প্রার্থী যেই হোক প্রতীক যেহেতু ধানের শীষ, তাই সবার উচিত প্রার্থীর পাশে দাঁড়ানো। শীর্ষ নেতা ও তাদের অনুসারীরা কেন প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন না বিষয়টি সুযোগ পেলে দলের সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনা করব।

আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন

Back to top button