মেহেন্দিগঞ্জে ভেঙে পড়ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার সেই ঘরগুলো
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
মেহেন্দিগঞ্জ প্রতিনিধি : বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘরগুলোর চারপাশে জমে আছে পানি। দেয়ালগুলোতে বড় বড় ফাটল। আবার অনেক দেয়াল ধসে পড়েছে। দৃশ্য দেখে মনে হয় ঘরগুলো পরিত্যাক্ত।
ঘরগুলো ভেঙে যাওয়ার দৃশ্য দেখে স্থানীয় এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মুজিবর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আশয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ভূমিহীনদের জমি ও ঘর দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ঘর নির্মাণ শেষ হতে না হতেই ভেঙে যাওয়ার দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ভেঙে দিচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ঘর পাবে, প্রতিটি ঘর আলোকিত হবে এবং চিকিৎসাসেবা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি দেশ। সেই ধারাবাহিকতায় সারা দেশে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাতে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনে গৃহীত প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ঘর নির্মাণ চলছে। তবে ওই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে অনেক জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জে উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম করে নিম্নমানের কাজ করায় নির্মাণকরা ঘরগুলো ভেঙে পড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেহেন্দিগঞ্জে উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১৫২টি ঘর নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে শ্রীপুর ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে ৪২টি ঘর নির্মাণ করা হয়। এরমধ্যে বায়ারচর গ্রামে ১৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ওই গ্রামে যেসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল, সেসব ঘরগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ঘরই ভেঙে গেছে। ইতোমধ্যে ভাঙ্গা ঘরের কয়েকটি ছবি আমাদের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, ঘরগুলোর নিচে পানি জমে আছে। দেয়ালগুলোতে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। আর বেশ কয়েকটি দেয়াল ধসে পড়েছে। তাই সেখানে মাত্র তিনটি পরিবার বসবাস করছে। অনেক কষ্টে বসবাস করলেও প্রশাসনের ভয়ে তারা মুখ খোলছেন না।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসন কারো সাথে কথা না বলেই তাদের ইচ্ছে মতো ঘর নির্মাণ করেছে। এছাড়া সেখানে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে নিম্ন মানের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তাই নির্মাণ করার সঙ্গে সঙ্গেই ঘরগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন মাসুদ বলেন, এ উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১৫২টি ঘর নির্মাণ করা হয়। এখন দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ৬৫টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে প্রথম পর্যায়ে যেসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে সেই ঘরগুলো ইতোমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তবে শ্রীপুর ইউনিয়নে বায়ারচর গ্রামে ভেঙে যাওয়া ঘরগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘরগুলো মেরামতের কাজ চলছে। তবে যেসব ঘর ভালো আছে সেগুলোতে মানুষ বসবাস করছে।
কাজ নিম্নমানের হয়েছে এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে যে কাজগুলো হয়েছে, ওই সময় আমি ছিলাম না। আমার যোগদানের মাত্র তিন মাস হয়েছে। তবে বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারে সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী আশ্রয় প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ে কোনো অফিস নেই। তবে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যখন যে তথ্য আমাদের নজরে আসে সেটা আমরা আমলে নিই। তারপর তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
উল্লেখ্য, চলতি বছর জানুয়ারি মাসে বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বরিশালের ১ হাজার ৫৫৬ জন হতদরিদ্র পরিবারকে জমি ও ঘর দেয়া হবে। গত জুন মাসের মধ্যে ওইসব পরিবারের কাছে ঘর ও জমি হস্তান্তর করার কথা ছিল। এ জন্য জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দ্রুত নির্মাণ করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী আশ্রয় প্রকল্পের ঘরগুলো। কিন্তু ঘর নির্মাণ শেষ হতে না হতেই ওই ঘরগুলো ভেঙে যাচ্ছে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে জেলার ১০ উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলায় ১৫৭ জন, বাকেরগঞ্জে ১২০ জন, মেহেন্দিগঞ্জে ১৫২ জন, উজিরপুরে ৭০ জন, বানারীপাড়ায় ২০০ জন, গৌরনদীতে ২০০ জন, মুলাদীতে ৩০০ জন, বাবুগঞ্জে ১৭০ জন, হিজলায় ৫১ জন, ও আগৈলঝাড়ায় ৩৬ জন হতদরিদ্র পরিবাকে ২ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত আধাপাকা একটি ঘর দেয়ার কথা ছিল। এই অনুসারে ঘর নির্মাণ করা হয়। আর প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।