বরিশালে সব সেক্টরে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন

স্টাফ রিপোর্টার : প্রাণঘাতী করোনার প্রকোপ থামছে না কোনো মতেই। ঈদের পর ধীরে ধীরে বাড়ছে এর প্রাদুর্ভাব। এরপরও বরিশালে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না কোথাও। নগরীর ব্যস্ততম সড়ক, দোকানপাট, বাজার, অফিস আদালত থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী পরিবহনেও স্বাস্থ্যবিধির বালাই খুঁজে পাওয়া যায় না। সরকার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করলেও তা অনেকটা লোকদেখানো ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এর ফলে ক্রমশই জীবনের ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন বরিশালবাসী। জানা গেছে, জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ছুঁই ছুঁই করছে। নগরীসহ বরিশালের সব সেক্টরে এভাবে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেলের তথ্য মতে, বরিশাল জেলায় মোট করোনায় আক্রান্ত ২ হাজার ৭২৩ জন। এর মধ্যে গত ১১ আগস্ট আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন, ১০ আগস্ট ৩৯, ৯ আগস্ট ৪১, ৮ আগস্ট ছয়, ৭ আগস্ট ২৬, ৬ আগস্ট ৪৫, ৫ আগস্ট ১২, ৪ আগস্ট ২৭, ৩ আগস্ট ১৭, ২ আগস্ট এক এবং ১ আগস্ট ছয়। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, ঈদের পর আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে গত ২১ জুলাই পরিপত্র জারি করা হয়। সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, গণপরিবহন ও হাটবাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা, গণপরিবহনসহ ১২টি স্থানে জনসাধারণের চলাচলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে পরিপত্রে। কিন্তু সরকারি এ নির্দেশনা মানা হচ্ছে না বরিশালে।
গতকাল বুধবার নগরীর ব্যাস্ততম সড়ক গীর্জা মহল্লা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার সব শপিং মলে ক্রেতা ও বিক্রেতা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। কারও কারও সাথে মাস্ক থাকলেও তা লোকদেখানো, নাকের নিচে পড়ে আছে। একই চিত্র দেখা গেছে আদালত পাড়ায়। সেখানে বিচারপ্রার্র্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। বরিশালের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরেও সরকারি কর্মকর্র্তা-কর্মচারীরা এখন অনেকাংশে করোনার প্রকোপের কথা যেন ভুলেই গেছেন। কথা হয় গতকাল বুধবার বরিশাল আদালতের এক তরুণ আইনজীবীর সাথে। তিনি বলেন, ঈদের পর আদালত খুলে দিলেও কেউ সতর্ক নন। মাস্ক পরছেন না অনেকেই। অনেকে আবার লোকদেখানো মাস্ক ব্যবহার করছেন। বরিশালের একটি সরকারি দপ্তরের কর্মচারীও একই ধরনের অভিযোগ করলেন।
একই দিন নগরীর চৌমাথা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মানুষে মানুষে একাকার হয়ে গেছে। অধিকাংশেরই মাস্ক নেই। ওই বাজারের ব্যবসায়ী মজিবর রহমান বলেন, সরকার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কড়াকড়ি না করলে স্বাস্থ্যবিধি মানানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
এদিকে সবচেয়ে বেহাল দশা পরিবহন সেক্টরে। নগরীর মধ্যে তিন চাকার যান অটোরিকশা, রিকশা, মাহিন্দ্রায় এ করোনা পরিস্থিতিতেও মাস্ক পরছে না অধিকাংশ যাত্রী ও চালক। বুধবার নগরীর আমানতগঞ্জ রোডে এক যাত্রীর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, মাস্ক আছে কিন্তু কেউ কিছু বলে না তাই পকেটেই রাখেন। এ করোনায় নগরী থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলরত বাসের যাত্রীদের অবস্থা করুন। নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী দুটি বাস টার্মিনালেই স্বাস্থ্যবিধির কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে না। যাত্রী তোলায়ও বাসে কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা নেই।
বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে নগরীর রূপাতলী থেকে পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ভোলা, খুলনা, যশোর, ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে আসছে। এর কোনো রুটের পরিবহনেই স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। একটি সিট খালি রেখে বসার নির্দেশনা থাকলেও তা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। কিন্তু যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সভাপতি কাওসার হোসেন শিপন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি উভয় পক্ষকেই মানা দরকার। তা না হলে সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে না। কিন্তু বাসের স্টাফরা যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার করতে বললে হিতে বিপরীত হয়। নথুল্লাবাদ পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানানোর ক্ষেত্রে শ্রমিকদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কিন্তু দেখা যায় অধিকাংশ সময় জোর করে যাত্রী উঠে যায়। জোর করে নামিয়ে দিতে গেলে বাস কর্তৃপক্ষের বদনাম হয়। স্টাফদের সাথে বাকবিত-াও হয়।
এ ব্যাপারে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ঈদের পর করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এ অবস্থায় নগরীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত জোরদার করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হলেও কেউ মানছেন না। সব সেক্টরেই স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে, করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করেন তিনি।