দুই ডজন ইউনিয়ন পরিষদে ভবন নেই
বরিশালে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের সেবা ব্যাহত
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
স্টাফ রিপোর্টার : স্থানীয় সরকারে সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ নির্বাচন হয় ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রামগঞ্জে উৎসবের পাশাপাশি উত্তাপও ছড়ায়। বরিশালেও আগাম বইছে ইউপি ভোটের হাওয়া। কিন্তু নির্বাচন শেষে তৃণমূলের জনগণের সেবা প্রদানের জন্য অনেক স্থানেই ইউপি ভবন নেই। কোনোটা জরাজীর্ণ হয়ে আছে, কোনোটার কার্যক্রম ভাড়া বাসায় চলছে। আবার কোনোটা নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। জেলার ১০ উপজেলায় এমন দুই ডজন ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের অবস্থা বেহাল। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স না থাকায় জনগণের সেবা প্রদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কীর্তনখোলা নদীর পূর্বপাড়ে সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়ন। এখানকার একটি একতলা ইউনিয়ন পরিষদ নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। জিও ব্যাগ ফেলে কোনোভাবে টিকিয়ে রাখা হয়েছে ভবনটিকে। উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন জরাজীর্ণ। পুরোনো ভবনে গ্রাম আদালত পরিচালনায় বেশ বেগ পেতে হয় বলে জানালেন সেখানকার চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান।
একই অবস্থা সদরের সায়েস্তাবাদ ও কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের। চরবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চলছে ভাড়া বাসায়। সেখানকার স্থানীয় যুবলীগ নেতা শাহিন খান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন না থাকায় জনগণের সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনীবুর রহমান বলেন, এগুলো এলজিইডি দেখে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমাতপুর ইউনিয়নে ভূমি জটিলতার কারণে নতুন ভবন নির্মাণ আটকে আছে। বর্তমানে যে ভবন আছে তাতে বৃষ্টি হলেই আশপাশে পানি জমে। সেবা নিতে আসা জনসাধারণকে থাকতে হয় দাঁড়িয়ে। রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরোয়ার মাহমুদ জানান, পুরাতন ভবন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও কাজকর্ম করতে হচ্ছে। ঝড়-বৃষ্টির সময় ভবনের ওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ে কার্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে যায়। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে বলে তিনি জানান।
মুলাদী উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নির্মাণ কাজ ২০১০ সালে শেষ হয়। কিন্তু নানা অনিয়মের কারণে ভবনটি এখনও চেয়ারম্যান মোকছেদ আলম মীর গ্রহণ করেননি। যে কারণে ইউনিয়ন পরিষদের কাজ সেখানকার একটি বিদ্যালয়ের কক্ষে পরিচালিত হচ্ছে।
উজিরপুরের হারতা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম বাজারের ভাড়া বাসায় পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান হরেন রায় বলেন, ইউনিয়নের এরিয়া নিয়ে টানাটানির কারণে ভবন হচ্ছে না। এর ফলে গ্রাম আদালত ও তথ্য কেন্দ্র ভাড়া বাসায় পরিচালিত হচ্ছে। একই অবস্থা উপজেলার জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের। সেখানকার কারফা বাজারে দোকান ভাড়া করে কার্যক্রম চলে বলে জানা গেছে।
মেঘনা ঘেরা মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম ভবন সংকটে ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার আলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলছে অস্থায়ী কার্যালয়ে। জয়নগর, দরিরচর, খাজুরিয়া, জাঙ্গালিয়া, নবগঠিত উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের অবস্থাও একই। শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ নদীভাঙ্গনের কবলে থাকায় ভবন নির্মাণ হচ্ছে না।
৫০ বছর ধরে চর গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চলছে জরাজীর্ণ টিনশেড ভবনে। সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যান সামশুল বারী মনির বলেন, পরিষদের যে জমি আছে তা তেঁতুলিয়া নদী ঘেঁষা। তাই সরকার ভবন করতে অনীহা প্রকাশ করেছে। খাস জমি থাকলেও তা উপযোগী নয়। তারা জমি কিনে দিতে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসনের সভায় এ বিষয়ে বললেও কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। যে কারণে ইউনিয়ন পরিষদে জনসম্পৃক্ততা ঘটছে না। পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংরক্ষণও দুষ্কর বলে জানান চেয়ারম্যান মনির।
বাকেরগঞ্জ উপজেলার নেয়ামতি ইউনিয়ন পরিষদ জরাজীর্ণ অবস্থায় পরিণত হয়েছে। সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন মাসুম শরীফ বলেন, ভবন না থাকায় জনগণকে সেবা প্রদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একই পরিস্থিতি গারুরিয়া ও কলসকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বানারীপাড়া, গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায়ও ৫ থেকে ৬টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন জরাজীর্ণ। কোনোটার ভবনই নেই। যে কারণে জনসাধারণের সেবা নিতে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসনের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন উপজেলার কিছু কিছু ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা নেই, তাই ভবন করা যাচ্ছে না। কোনোটা আবার নদীভাঙনের কবলে। তারা যখনই পরিদর্শনে যান এগুলো পর্যালোচনা করে সরকারকে অবহিত করেন। তবে ভবন না থাকায় সবচেয়ে বেশি ব্যাহত হয় গ্রাম আদালত ও তথ্য কেন্দ্র পরিচালনা করা এমনটা অকপটে স্বীকার করে তিনি বলেন, জমি পেলে আর সরকারকে লিখলে দ্রুত সময়ে অনুমোদন পাওয়া যায়। তবে এজন্য চেয়ারম্যানদের এগিয়ে আসতে হবে বলে জানান উপ-পরিচালক শহীদুল।