বিএনপির সমাবেশে দুই গ্রুপের হাতাহাতি
চেয়ার ছোড়াছুড়ি, পুরো মাঠজুড়ে আতঙ্ক
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
আহসান হাবিব : বিভাগীয় সমাবেশে বিকেল পাঁচটার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরাজিত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের বক্তব্য চলাকালীন সময় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি, চেয়ার ভাংচুর ও ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে।
কয়েক মিনিট ধরে নেতাকর্মীরা মাঠের মধ্যে দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে একে অপরের ওপর চেয়ার ছুড়তে থাকেন। হাতাহাতি, চেয়ার ভাংচুর ও ছোড়াছুড়ির হট্টগোলের মুহুর্তে সমাবেশের পুরো মাঠজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। নেতাকর্মীরা চারিদিকে ছোটাছুটি শুরু করেন। যা চলে কয়েক মিনিট ধরে। এসময় মঞ্চ থেকে বারবার শান্ত হতে বলেন বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও ইশরাক হোসেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। দৌঁড়ে পালানো বিএনপির সমর্থকরা আবারও সমাবেশস্থলে আসার পরক্ষণেই সমাবেশ স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে। বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রেজাউল করিম রনি গ্রুপ ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে চেয়ারে বসা নিয়ে এই হট্টগোল বাঁধে। তবে হতাহতেরও কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
সূত্রমতে, সর্বশেষ ছয়টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ছয় সিটিতে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মনোনীত পরাজিত মেয়র প্রার্থীরা। তারই ধারাবাহিক কর্মসূচির প্রথম সমাবেশ বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার দিকে বরিশাল জিলা স্কুল মাঠে শুরু হয়।
সমাবেশ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম। সমাবেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির নেতৃবৃন্দরা তাদের সমর্থকদের নিয়ে উপস্থিত হন।
বরিশালের বিভাগীয় মহাসমাবেশ সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত পরাজিত মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার।
সমাবেশ সফল করতে অতিথি হিসেবে ঢাকা থেকে যোগ দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরাজিত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল প্রমুখ।
মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া’র সঞ্চালনায় বিভাগীয় সমাবেশের শুরুতে স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা বক্তব্য রেখেছেন। তারা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত বাতিল, বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি : নির্দলীয় নিরপক্ষে সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত ছয়জন মেয়র প্রার্থী। দেশব্যাপী নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল জিলা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় বিক্ষোভ সমাবেশ তারা এ দাবি করেছেন।
সমাবেশে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত পরাজিত মেয়র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, নিশি ভোটের আগেরদিন রাতে পুলিশি ভয় দেখিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ভোট করেছে সরকার। সমাবেশের অনুমতি দিয়েও বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার বিএনপি নেতাদের আসতে দেওয়া হয়নি। একদিকে তারা মিটিং করতে অনুমতি দিচ্ছে অন্যদিকে পুলিশ দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।
ঢাকা সিটি দক্ষিণ কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেন, ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাত ধরে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। জনগণের ভোটে আসার সুযোগ নেই বলেই বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে আওয়ামী লীগ। আমরা পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবি জানাই এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, কোনো নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে পারছেন না। বর্তমান আওয়ামী সরকার বলে তারা দুর্নীতির সাথে আপস করে না কিন্তু তারা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ডাঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, সিটি নির্বাচনগুলোতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার স্বপ্ন দেখছে সরকার। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচন চাই।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, বিচারবিভাগ আর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর আলাদা কিনা সেটা জানতে চাই। আমরা নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চাই এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন চাই।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নজরুল আসলাম মঞ্জু বলেন, ছয় সিটি কর্পোরেশনের প্রার্থীদের নিয়ে তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশ শুরু করেছি। শেখ হাসিনার অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
কেন্দ্রীয় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, সমাবেশস্থলে আসতে আজ পথে পথে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। নেতাকর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। ভোলার নেতাকর্মীদের আসতে দেওয়া হয়নি। সমাবেশস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ। তারপরেও নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখা যায়নি।