বন্যায় নাকাল ৫০ লাখ মানুষ
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
অনলাইন ডেস্ক :মধ্যাঞ্চলের জেলা ফরিদপুর, রাজবাড়ী, জামালপুর, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও ঢাকার দোহার উপজেলায় প্রধান নদনদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে কোনো কোনো এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। উত্তরে গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জে নদীর পানি কমলেও বন্যার উন্নতি হয়নি। সুনামগঞ্জেও বানের পানি কমছে ধীরগতিতে। ফলে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ১০ লাখ ছুঁইছুঁই। এতে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদে বন্যার পানির সঙ্গে লড়ছে ৫০ লাখের বেশি মানুষ। এদিকে বন্যার পানির তোড়ে রোববার রাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ঝিনাই নদীর একটি সেতুর সংযোগ সড়ক নদীর পেটে চলে গেছে। অন্যদিকে গোপালগঞ্জের কালনা ফেরিঘাটের পন্টুনের সংযোগ সড়ক বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার পর্যন্ত ৩১টি জেলা বন্যাদুর্গত হয়েছে। ১৫৩টি উপজেলার ৯০৮ ইউনিয়নে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা নয় লাখ ৮৪ হাজার ৮১৯। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪৭ লাখের বেশি মানুষ। ১০ জেলায় ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৩ জনই শিশু। জামালপুরে ১৫ এবং কুড়িগ্রামে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এক হাজার ৬০৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন ৮৯ হাজার ৩০০ জন মানুষ এবং ৭৫ হাজার ৭০২টি গবাদিপশু। দুর্গত এলাকায় কাজ করছে ৩৮৫টি মেডিকেল টিম। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার আশপাশের নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ১৭ জেলায় ৩০টি পয়েন্টে নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে।
ফরিদপুর : দ্বিতীয় দফা বন্যায় ফরিদপুরের পদ্মার পানি সোমবার এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপদসীমার ১১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকির মুখে রয়েছে ফরিদপুর শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ। সেখান আশ্রয় নেওয়া বন্যার্তদের সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। জেলা প্রশাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় সাত উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৫৫০টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। পানিবন্দি হয়ে রয়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ।
রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দ : রাজবাড়ীতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার নিম্নাঞ্চলের বেশির ভাগই এখন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলার চার উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এদিকে পদ্মার পানি সোমবার বিকেলে বিপদসীমার ১১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় গোয়ালন্দ বাজার ও গোয়ালন্দঘাট (দৌলতদিয়া) স্টেশনের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় রেললাইন পানিতে তলিয়ে গেছে। এ কারণে রোববার বিকেল থেকে এ দুই স্টেশনের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গোপালগঞ্জ : মধুমতী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কালনা ফেরিঘাটের উভয় পাড়ের পন্টুনের গ্যাংওয়ে তলিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পরিবহনে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। গত ২২ জুলাই থেকে ওই ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে পানির নিচে।
মুন্সীগঞ্জ : পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সোমবারও মুন্সীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল শ্রীনগরের ভাগ্যকুল পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ও লৌহজংয়ের মাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হয়েছে। বর্তমানে এই জেলার নদী তীরবর্তী ১৫০টি গ্রামে পানিবন্দি রয়েছে অর্ধলক্ষাধিক পরিবার।
দোহার (ঢাকা) : বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে ঢাকার দোহার উপজেলায়।পদ্মার পানিতে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার ত্রিশটির বেশি গ্রাম। এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। সড়কে পানি ওঠায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
নেত্রকোনা : জেলার নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সোমবার ভারি বর্ষণে জেলা শহরের মোক্তারপাড়ায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পানি উঠে যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। জেলার কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ ও শিবালয় : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা পয়েন্টে বিপদসীমার ৮২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনার পানি। অন্য নদীতেও পানি বেড়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার ৬৫ ইউনিয়নের মধ্যে ৫০টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। নতুন করে পানি উঠে গেছে জেলা শহরের আদালত চত্বরে ও ঢাকা আরিচা মহাসড়কের উথুলী সংযোগ সড়কে। এদিকে প্রতিদিন শিবালয় উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সোমবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মা-যমুনা নদীর তীরবর্তী তেওতা, ষাইটঘর, সমেজঘর, সাতুরিয়া, গান্দাইল, নিহালপুর, চরশিবালয়, যমদুয়ারা, বাশাইল, উথলীসহ প্রায় দুইশ’ গ্রামের হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
টাঙ্গাইল : জেলার বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। জেলায় এখন পর্যন্ত পাঁচটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ১১টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের গ্রামগুলো নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। এতে নতুন করে একের পর এক রাস্তাঘাট ও ব্রিজ পানির স্রোতে ভেঙে যাচ্ছে।
জামালপুর ও সরিষাবাড়ী : জেলা বন্যা কন্ট্রোলরুমের সূত্র মতে, বন্যার পানিতে এখনও ডুবে আছে জেলার ৫৯ ইউনিয়নের ৬৭৭টি গ্রাম। এতে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন একজন মুক্তিযোদ্ধাসহ ২৫ জন।
এদিকে সরিষাবাড়ীতে ঝিনাই নদীর ওপর স্থাপিত ১৬০ মিটার সেতুর সংযোগ সড়কের প্রায় ২৫মিটার বন্যার পানির তোড়ে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ৩০টি গ্রামের মানুষের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রোববার রাত ১১টার দিকে উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর শিশুয়া-বাঘমারা গ্রাম এলাকায় ঝিনাই নদীর এই সেতুটির সংযোগ সড়কে ভেঙে যায়। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সরিষাবাড়ীর সাতটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ পৌর এলাকায় বন্যার পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। পৌর এলাকার একাধিক সরকারি দপ্তরসহ হাটবাজার, রাস্তাঘাট ও রেললাইন পানির নিচে।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। জেলা পয়েন্টে সোমবার পানি মাত্র ৪ সেন্টিমিটার কমলেও বিপদসীমার ওপরেই রয়েছে। এতে জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় সব নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি এখনও বিপদসীমার অনেক ওপরে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্যদিকে গাইবান্ধা জেলা শহর সংলগ্ন বল্লমঝাড়, কুপতলা, খোলাহাটি, ঘাগোয়া, গিদারী ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।