ইলিশ আহরণে রেকর্ড গড়ছে দক্ষিণাঞ্চল!
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
স্টাফ রিপোর্টার : ভরা মৌসুম চলছে রূপালী ইলিশের। মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী ও সাগরে বিগত চার বছরের জুলাই মাসের তুলনায় এ বছরের জুলাইতে রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়েছে। এ অঞ্চলের মোকামগুলোতে গত জুলাই মাসে ইলিশ বেচাকেনার হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য পাওয়া গেছে। অবশ্য স্থানীয় হাটবাজারে ইলিশের সরবরাহ খুবই কম। যে কারণে দামও সাধারণ মানুষের আয়ত্তে নেই। বরিশালের প্রান্তিক জেলেরা দাবি করেছেন, ইলিশ আহরণে মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের চিত্রের ফারাক ব্যাপক।
দেশে মোট ইলিশের ৬৬ শতাংশ আহরিত হয় বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী ও সংলগ্ন সাগর থেকে। ২০১৬ ও ১৭ সালের মৌসুমে দক্ষিণের নদ-নদীতে রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৮ সাল থেকে এর পরিমাণ অনেক কমতে থাকে। এবার মৌসুমের প্রথম মাসেই (জুলাই) বেশি পরিমাণ ইলিশ পাওয়া গেছে। গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে এ বছরের জুলাইতে ৬ হাজার ২৭৯ টন বেশি ইলিশ ধরা পড়েছে দক্ষিণের নদ-নদী ও সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে এমনটাই পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যে। বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাইতে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় মোট ইলিশ পাওয়া গেছে ১৮ হাজার ৬৫ টন। গতবছর (২০১৯) জুলাইতে এর পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৭৮৬ টন। তার আগে ২০১৮ সালের জুলাইতে ১০ হাজার ৬০০ টন ইলিশ পাওয়া গিয়েছিল।
যদিও ২০১৯ সাল থেকে মৎস্য অধিদপ্তরের নতুন আইনে ১ জুলাই থেকে নদ-নদীতে নির্বিঘেœ ইলিশ ধরা শুরু হলেও সাগরে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। তারপরও ২০১৯ সালের জুলাই থেকে বিগত বছরগুলোর জুলাইয়ের চেয়ে বেশি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। গতবছর এর পরিমাণ ছিল আগের
বছরের (২০১৮) চেয়ে সহস্রাধিক টন বেশি। এর আগে ২০১৭ এর জুলাইতে ১৩ হাজার ৫৭৪ টন এবং ২০১৬ এর জুলাইতে ১৬ হাজার ৭৭৫ টন ইলিশ আহরিত হয়েছিল বিভাগে। ওই দুই বছর দেশে ইলিশ উৎপাদনে রেকর্ড হয়েছিল। ওই রেকর্ড অতিক্রম করে এ বছর জুলাইতে ১৮ হাজার ৬৫ টন ইলিশ পাওয়ায় মৎস্য বিশেজ্ঞরা মোট ইলিশ উৎপাদনে বিগত রেকর্ড ভঙ্গ হওয়ার আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।
তবে প্রান্তিক পর্যায়ের জেলেরা দাবি করেছেন, ভরা মৌসুম হলেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে অনেকাংশে কম। দ্বীপ জেলা ভোলার ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ আলী বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর কাগজে-কলমে যে তথ্য দিয়েছে, বাস্তবের সঙ্গে তার মিল নেই। ভোলায় গত মাসে ইলিশ আহরণ তেমন একটা হয়নি। চলতি মাসে ইলিশ ধরা পড়া শুরু করেছে। বরিশাল মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি অজিৎ দাস মনু বলেন, এখন ইলিশের পরিমাণ অনেকটা কম। গত মাসেও ইলিশ কম আহরণ হয়েছে।
জানতে চাইলে মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরেও এসেছে। ঢাকার বাজারে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায়, তার চেয়ে কম বরিশালের বাজারে’। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, আগে দক্ষিণে মোকাম ছিল তিনটি যথাক্রমে বরিশাল নগরীর পোর্টরোড, বরগুনার পাথরঘাটা এবং পটুয়াখালীর আলিপুর-মহিপুর। এখন আরও বিভিন্ন নদীর তীরে অঘোষিত ইলিশ মোকাম হওয়ায় সেখান থেকে ইলিশ সরাসরি ঢাকা-চট্টগ্রামের দিকে চলে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে বরিশালের বাজারে।
মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, সরকারের নেওয়া নানামুখী উদ্যোগের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন গত কয়েক বছর ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ইলিশ আহরিত হয় ৫ লাখ ১৭ হাজার ১৮৮ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগ থেকেই আহরিত হয় ৩ লাখ ৩২ হাজার ২৫ মেট্রিক টন।
এর আগের অর্থবছরে (২০১৭-১৮) দেশে আহরিত মোট ইলিশের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৭ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বরিশাল থেকে আহরিত হয় ৩ লাখ ২৪ হাজার ২৯৭ মেট্রিক টন, যা দেশে মোট উৎপাদনের প্রায় ৬৬ শতাংশ।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ইলিশ আহরণের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সে অনুযায়ী বরিশালেও তা প্রায় ৮ হাজার মেট্রিক টন বৃদ্ধি পায়। চলতি অর্থবছরে দেশে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। আর বরিশাল বিভাগে তা ৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, যা মোট উৎপাদনের ৬৬ শতাংশ।
এসব ব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার বলেন, আরও প্রায় দুই মাস ইলিশ মৌসুম রয়েছে। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী আগামী আমাবস্যার (বুধবার) পরে সাগরে সৃষ্ট অতি জোয়ারে বেশি পরিমাণ ইলিশ অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে প্রবেশ করবে। তখন বেশি পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়বে।