ভোলায় বিআইডব্লিইটিএ’র উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযাগ
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
এইচ আর সুমন, ভোলা : ভোলা বিআইডব্লিউটিএ’র অফিস এখন দূর্নীতির আখড়া খানায় পরিণত হয়েছে। পূর্বের বকেয়া টাকা আদায় না করে পুনঃইজারা দেয়া, অনুমিত থাকলেও ঘাটে যাত্রীবাহী লঞ্চ ভিড়তে না দেয়া, বিভিন্ন মাধ্যম থেকে মাসিক উৎকোচ নেয়া এবং লঞ্চ ঘাট করা বাবদ অতিরিক্ত মাত্রায় টাকা আদায় করাসহ নানা অনিয়ম আর দূর্নীতির অভিযাগ পাওয়া গেছে ভোলা বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী-পরিচালক কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে।
ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা, গাজীপুর, (কালুপুর) বিশ্ব রোডের মাথার ঘাট ইজারাদার আনোয়ার হোসেনের অভিযাগে জানা যায়, ভোলা বিআইডব্লিউটএ কর্তৃপক্ষ ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে কোনো প্রকার দরপত্র আহ্বান ছাড়াই এবং ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ঘাটের বকেয়া ৩৪ লাখ এবং সি-ট্রাক ভাড়া বাবদ বকেয়া ১৭ লাখ টাকা সম্পূর্ণ আদায় না করেই নিয়মবহির্ভূতভাবে ইলিশা লঞ্চ ঘাটের পূর্বের ইজারা বহাল রেখে ৫১ লাখ টাকার পে-অর্ডারের বিপরীতে এ বছর ভ্যাটসহ ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকায় একই ব্যাক্তিদেরকে পূনঃইজারা দেয়া হয়।
নিয়ম অনুযায়ী বছরের শেষ জুন মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধ করার পরই কেবলমাত্র পরবর্তী টেন্ডারে অংশগ্রহণ করা হয়। কিন্ত বকেয়া আদায় না করেই সূবিধাভোগী হয়ে ওই ইজারাদারদের যোগ সাজশে ঘাট ইৎারা দেয় সহকারী-পরিচালক কামরুজ্জামান।
অপরিদকে, ইলিশা গাজীপুর (কালুপুর) বিশ্ব রোডের মাথার লঞ্চ ঘাট থেক মাত্র ১’শ ২০ গজের মধ্যে ইলিশা ঘাট ইজারা দেয়া নিয়ও রয়েছে নানা প্রশ্ন। ইলিশা লঞ্চ ঘাটটি ছিল বর্তমান ইলিশা বাজার থেকে প্রায় পৌনে ১ কিঃমিঃ উত্তর পশ্চিম। নদী ভাঙনের কারণে বর্তমান ফেরীঘাটের সংলগ্নে নিয়ে আসা হয় ইলিশা ঘাটটি এবং দেয়া হয় পল্টুন। ফের ফেরী এবং লঞ্চের সাথে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। অন্যদিকে, ইলিশা ঘাট থেকে মাত্র ১শ’ ২০ গজ দুরে রয়েছে ইলিশা-গাজীপুর (কালুপুর) বিশ্বেরাড রাস্তার মাথার লঞ্চ ঘাটটি। এ লঞ্চ ঘাটটি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ১৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকার পে-অর্ডারের বিপরীতে ৪১ লাখ ২৬ হাজার টাকায় এ ঘাটের ইজারা নেয় জনৈক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আমার ইজারা নেয়া এ ঘাটে ঢাকা টু মনপুরা ও হাতিয়ার যাত্রীবাহী লঞ্চ ফারহান-০, ফারহান-৩ ও ফারহান-৪ ঘাট করার অনুমোদন রয়েছে। কিন্ত বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানের অনুমিত ও নির্দেশনা থাকা সত্যেও ইলিশা ঘাটের ইজারাদারদের সাথে কারসাজি করে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করে অনুমোদন করা লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে হুমকী-ধামকি দিয়ে লঞ্চগুলোকে ইলিশা ঘাটে ভীড়তে বাধ্য করছেন ওই সহকারী-পরিচালক কামরুজ্জামান। ফের ঘাটে লঞ্চ ভিড়ানোর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় বড় ধরনের লোকসান ও ক্ষতির সম্মূখীন হয়ে পড়েছে ঘাট ইজারাদার আনোয়ার হোসেন। বর্তমানে তার ঘাট বাতিলের হুমকীও দিয়েছেন কামরুজ্জামান।
একদিকে ইজারাদারের ঘাটে অনুমোদিত লঞ্চ ভিড়তে না দেয়া অপরদিকে লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রীবাহী লঞ্চ পারিজাত, দোয়েল পাখী ও ফারহান-০ ইলিশা ঘাট করা বাবদ সরকারের ১৮০ টাকা টোল নির্ধারিত থাকলেও সহকারী-পরিচালক কামরুজ্জামান প্রত্যেক লঞ্চ থেকে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা আদায় করেন বলে জানিয়েছে মালিক পক্ষের ওয়াহিদ কাজি, রুহুল আমিন ও সাধারন মালিক আবছারউদ্দিন। ওই সহকারী-পরিচালক নিজেই অঘোষিত ইজারাদার, নৌ-কর্তৃপক্ষ। এখানে একচ্ছত্র আধিপত্ব তার। এসব অনিয়মের বিষয়ে আনোয়ার বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান মেহাদ্বয়েক অবহিত করলে তিনি বলেছেন সুস্পষ্ট অভিযাগ পেলে ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন অনোয়ার হোসেনকে।
এসব অভিযাগ নিয় বিভিন্ন সময়ে ভোলা বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক কামরুজ্জামানের সাথে আলাপ করলে তিনি বিভিন্ন সময়ে মিডিয়াকর্মীদের বিআইডব্লিউটিএর পরিচালকদের উপর দায় চাপিয়ে দিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। তবে এসব অভিযাগ সম্পর্কে তিন বলেন, কোনো ইজারাদারের বকেয়া নেই, বকেয়া জমার রশিদ রয়েছে। ঘাট সম্পর্কে বলেন, যা কিছু হয় উপরের নির্দেশে হয়। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ৫১ লাখ টাকা বকেয়ার সত্যতা স্বীকার করে ইলিশা ঘাট ইজারাদার সরোয়ার্দ্দী মাস্টার বলেন, করোনার কারণে ৬ লাখ টাকা মওকূফ করেছে। তবে এখনও ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে। তার ঘাটে অন্য ঘাটের লঞ্চ ভিড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ওই ঘাটটি কালুপুর মৌজায় নয়। তাই লঞ্চগুলো আমার ঘাটে ভিড়ে।
ইলিশা (কালুপুর) বিশ্বেরাড রাস্তার মাথা লঞ্চ ঘাটে তাসরীফ-১ ও তাসরীফ-২ লঞ্চ ভিড়ানো প্রসেঙ্গ মেসার্স ফেয়ার সিপিং লাইন্স লিঃ এর মহাপরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, পূর্বের অনুমোদন অনুযায়ী ইলিশা ঘাটেই আমাদের লঞ্চ ভিড়ে। এর মধ্যে একদিন ফারহান-০ লঞ্চ ইলিশা ঘাটে ভিড়ার কারণে আমরা ইলিশা (কালুপুর) বিশ্বেরাড রাস্তার মাথার ঘাট করেছি। তবে ইলিশা ঘাটের পাশে ফেরীঘাট হওয়ায় যে কোনো সময়ে দূর্ঘটনার আশংকা থাকায় পার্শবর্তী ইলিশা (কালুপুর) বিশ্বরোড রাস্তার মাথার লঞ্চঘাটে ভিড়ানোর জন্য গত ২৭ জুলাই ২০২০ তারিখ নৌ-নিরাপত্তা, বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক বরাবের আবেদন করেছে। অনুমিত পেলে ওই ঘাট করবো।