প্রধান সংবাদবরিশাল বিভাগের সংবাদ
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
আপ্রাপ্তবয়স্ক ১১ আসামীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা
বরগুনায় আলোচিত রিফাত হত্যা মামলা
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
সঞ্জীব দাস, বরগুনা : বরগুনার বহুল আলোচিত শাহ নেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির মধ্যে ৬ আসামীর ১০ বছর করে, ৪ জন ৫ বছর করে এবং একজনকে ৩ বছরের কারাদন্ড প্রদান করেছেন আদালত। এ মামলায় বেখসুর খালাস দেওয়া হয়েছে ৩ জনকে। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে বরগুনার শিশু আদালতের বিচারক মো: হাফিজুর রহমান এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় প্রদান করেন। রায় প্রদানকালে সকল আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
সর্বোচ্চ ১০ বছর করে দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, মো: রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজী, মো: রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার, মো: আব্দুল্লাহ্ ওরফে রায়হান, মো: ওলিউল্লাহ্ ওরফে অলি, মো: নাঈম, মো: তানভীর হোসেন। ৫ বছর করে দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, জয় চন্দ্র সরকার ওরফে চন্দন, মো: নাজমুল হাসান, মো: রাকিবুল হাসান নিয়ামত, মো: সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ্ ওরফে মহিবুল্লাহ্ এবং প্রিন্স মোল্লাকে সর্বনিম্ন ৩ বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মারুফ মল্লিক, রাতুল শিকদার জয় ও মো: আরিয়ান হোসেন শ্রাবনকে বেখসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
এর আগে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এজলাসে আনা হয় কারাগারে থাকা ৬ আসামী এবং স্বজনদের সাথে আদালতে আসেন জামিনে থাকা ৮ আসামী। দুপুর একটা ছয় মিনিটে রায় পড়া শুরু করে দুপুর আড়াইটার সময় রায় ঘোষণা করেন বিচারক।
আদালতের মন্তব্য:
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে শাহ নেওয়াজ রিফাত শরীফকে কুপিয়ে যে হত্যাকান্ডটি ঘটানো হয়েছিল, সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক আসামীরা হামলা এবং হত্যা পরিকল্পনায় সরাসরি জড়িত থাকলেও কলেজ গেট থেকে প্রথমে নিহত রিফাত শরীফকে ঝাপটে ধরে আনার পিছনে মূল ভূমিকা ছিলো দন্ডপ্রাপ্ত অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামী রিশান ফরাজী, রিফাত হাওলাদারসহ এসব আসামীদের। এসব কিশোর আসামীরা নিহত রিফাতকে সরাসরি না কোপালেও অস্ত্র সরবরাহ্, হত্যা পরিকল্পনা, ঘটনার সময় চারদিক থেকে পাহারা দেওয়া, প্রথমে শারীরিক ভাবে মারধরের বিষয়টি সাক্ষ্যপ্রমান এবং ভিডিও ফুটেজ এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
আদালত আরও বলেন, এসব আসামীরা ফেসবুকের মাধ্যমে গ্যাং গ্রুপ খুলে নানা ধরনের বখাটে কর্মকান্ড চালিয়েছে। যে শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ তাদের মাধ্যমে এ ধরনের কর্মকান্ড কোন ভাবেই কাম্য নয়। এর ফলে রাজধানীসহ দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠে একাধিক কিশোর গ্যাং। বিভিন্ন মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ হয় এসব গ্যাং বাহিনীর কর্মকান্ড। তাই এদের উপযুক্ত বিচার না হলে বরগুনাসহ সারাদেশে আরও গড়ে উঠবে এসব কিশোর গ্যাং। এ সময় বিচারক গত ঈদুল ফিতরের দিন বিকেলে বরগুনা সদর উপজেলার গোলবুনিয়া নামকস্থানে কিশোর হৃদয় হত্যাকান্ডের বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
কোন শিশু যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়টি রায়ে লক্ষ রাখা হয়েছে। তবে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই শিশু আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে বিচারক মন্তব্য করেন। কিন্তু পুলিশ হেফাজতে আসামীদের মারধর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে এমনটি প্রমাণিত হয়নি।
রিফাত শরীফ হত্যা পরিকল্পনার সাথে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি, নিহত নয়ন বন্ড এবং রিফাত ফরাজী মূল ভূমিকায় ছিলেন বলেও রায় প্রদানকালে বিচারক উল্লেখ করেন। এসব কিশোর আসামীদের অন্যতম অপরাধ হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক বখাটেদের সাথে সঙ্ঘভুক্ত হওয়া।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নিহত রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, আমি রায়ে সন্তষ্ট। তবে খালাসপ্রাপ্তদের ব্যাপারে আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অন্যদিকে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের আইনজীবী মো: শাহজাহান, মো: হুমায়ূন কবির, গোলাম মোস্তফা কাদের জানান, তারা এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল এ রায়ে সন্তষ্টি প্রকাশ করেন।
গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শাহ নেওয়াজ রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরেরদিন নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু পরে ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নিসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু’ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন আসামী করা হয়েছে। এ বছরের ৮ জানুয়ারি অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন শিশু আদালত এবং ১৩ জানুয়ারি ১৪ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহন শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ এবং দু’পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক খন্ডন শেষে গত ১৪ অক্টোবর রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন আদালত।৪৪ কর্মদিবসের মধ্যে এ রায় প্রদান করা হয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক মামলায় নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নিসহ ৬ জনের ফাঁসি এবং ৪ জনকে খালাস দেয় আদালত।এ ঘটনার প্রধান আসামী নয়ন বন্ড গত বছরের ২ জুলাই পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে।