প্রধান সংবাদ
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
মিন্নিসহ ৬ জনের ফাসির আদেশ
বরগুনা রিফাত শরীফ হত্যার রায়
Deprecated: preg_split(): Passing null to parameter #3 ($limit) of type int is deprecated in /home/barishaldorpon/public_html/wp-content/themes/jannah/framework/functions/post-functions.php on line 791
সঞ্জীব দাস,বরগুনা : বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১০ আসামির মধ্যে ৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং প্রত্যেককে পঞ্চাস হাজার টাকা টাকা জরিমানা অপর চার আসামিকে খালাস প্রদান করেছেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ আসাদুজ্জামান। ৩০সেপ্টেম্বর বুধবার বেলা একটা পনের মিনিটের সময় তিনি এ রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলো রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী (২৩) আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১) মহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯) রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরপে টিকটক হৃদয় (২২)মোহাম্মদ হাসান (১৯) এবং আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯) খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছেন মোহাম্মদ মুসা (২২) রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০)মোঃ সাগর (১৯) এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন(২১) । রায় ঘোষণার সময় আদালতে একমাত্র পলাতক আসামি মুসা ব্যতীত সকল আসামি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং আসামি পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ গঠনের পরে ৪৩ কার্যদিবসের মধ্যে রায় ঘোষিত হল। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ গঠনের পরে ৩২ কার্যদিবসের মধ্যে ৭৬ জন সাক্ষী জবানবন্দি আদালতে উপস্থাপন করেন সাক্ষীদের জেরা জবানবন্দি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং যুক্তিতর্ক শেষে প্রায় ২শ পৃষ্ঠার এই রায়ের অংশবিশেষ প্রচার কালে বিজ্ঞ আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন হত্যাকাণ্ডটি দেশেবিদেশে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব পাওয়ায় আলোচিত। আসামিদের প্রত্যেকের বয়স প্রায় ২৩ বছরের কাছাকাছি এবং সবাই যুবক এই নিষ্ঠুর এবং মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যাতে করে যুবক শ্রেণি জানতে পারে যে অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না । সেই কারণে সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় এই রায়ের প্রেক্ষিতে সমাজে স্বস্তি ফিরে আসবে । যুবকদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কমে যাবে। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে নিহত রিফাত শরীফের পিতা দুলাল শরীফ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ভুবন চন্দ্র হাওলাদার বলেন এই রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে অপরদিকে আসামি আয়শা সিদ্দিকী মিন্নির পিতা দুলাল ফরাজী বলেন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি কে সাক্ষী থেকে আসামি করা হয়েছে এবং এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচার বিঘ্নিত হয়েছে এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান। আদালতে রায় প্রচার এর পূর্বেই কোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য প্রচুর পরিমাণে পুলিশ নিয়োগ করা হয় কঠোর নিরাপত্তায় মাধ্যমে রায় প্রচার করা হয়।
মামলায় ১ জানুয়ারি বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শেষে প্রাপ্তবয়ষ্ক আসামীদের মামলার রায়ের তা মধ্যে এক নম্বর থেকে সাত নম্বর অভিযুক্ত সাতজনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৪ ও ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এছাড়া ৮ ও ১০ নম্বর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে ২১২ ও ১২০ বি ১ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলার ৯ নম্বর আসামির বিরুদ্ধে আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে ১২০ বি ১ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা এক এবং অভিন্ন পরিকল্পনায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা দন্ডবিধির ৩০২ও ৩৪ ধারায় আসামীদেরকে দোষী সাব্যস্ত করে আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং প্রত্যেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদেশ দেয়া হয়। অন্যদিকে খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে মোকদ্দমা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
রিফাত ফরাজী বরগুনা পৌর শহরের ধানসীড়ি সড়কে আহসান হাবিব দুলাল ওরফে দুলাল ফরাজীর ছেলে। তাকে গত ৩ জুলাই ২০১৯ গ্রেপ্তার করে পুলিশ আদালতে সোপর্দ করে। রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী এই রিফাত ফরাজী। নয়ন বন্ডের ঘনিষ্ঠ সহচর রিফাত ফরাজী মূলত এলাকায় ছিচকে চুরি থেকে শুরু করে বরগুনায় অবস্থানরত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের ম্যাচে হানা দিয়ে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করে অর্থ আদায় করত।
২০১৯ সালে মার্চ মাসে বন্ড ০০৭ নামের একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খুলে গ্রুপে সদস্য যুক্ত করতে থাকে। রিফাত শরীফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার আগের রাতে এই ফেসবুক গ্রুপেই হত্যার সর্বশেষ নির্দেশনা দেয় রিফাত ফরাজী। সেখানে গ্রুপের সবাইকে ২৬ জুন বুধবার সকাল ৯টার মধ্যে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়। মোহাম্মদ নামে একজনকে সকাল ৯টায় আসার সময় রামদা নিয়েও আসতে বলে সে। রিফাত শরীফ কলেজ থেকে বের হওয়ার পর পরিকল্পনা মোতাবেক তাকে প্রথম কলার ধরে রিফাত ফরাজী।
এরপর নয়ন বন্ডের হাতে দিয়ে সে দৌড়ে দুহাতে দুটি রামদা নিয়ে এসে একটি নয়ন প্রথম কোপাতে শুরু করে। পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতে হামলা-ভাংচুর, ব্যংক কর্মকর্তার ছেলেকে কুপিয়ে যখমসহ তার বিরুদ্ধে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আগেও ভাংচুর, চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে মোট ৮টি মামলা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এসব মামলায় বেশ কয়েকবার গ্রেফতারও হয় সে। তবে আইনের ফাঁক গলে প্রতিবারই আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে সে। ধানসিঁড়ি রোড, কেজি স্কুল রোড এবং ডিকেপি রোডের বাসিন্দারা তার হেন কর্মকান্ডে ভীত এবং অন্যদিকে অতিষ্ঠ ছিল। রিফাত ফরাজীর বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৪ ও ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
২নং আসামী আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি ওরফে রাব্বি আকন: আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন বুড়িরচর ইউনিয়নের পশ্চিম কেওড়াবুনিয়া এলাকার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল কালামের ছেলে। পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্র অনুসারে রাব্বি আকন এ মামলার ২নং আসামী। বন্ড গ্রুপের অন্যতম সদস্য রাব্বি আকন বন্ড গ্রুপের প্রধান নিহত নয়ন বন্ড সেকেন্ড ইন কমান্ড রিফাত ফরাজীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। রিফাত শরীফ হত্যার পরিকল্পনায় ও ঘটনাস্থলে সক্রিয় ভুমিকায় ছিল রাব্বি আকন। ঘটনার আগের দিন ২৫ জুন রিফাত শরীফকে হত্যা বিষয়টি রিফাত ফরাজী মোবাইলে রাব্বি আকনকে জানায়। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৮টার সময় নিহত রিফাত শরীফ কলেজে রওয়ানা করলে রাব্বি আকন সকাল সাড়ে আটটায় রিফাত ফরাজীকে মুঠোফানে খবরটি জানায় এবং কলেজের আসতে বলে।
সকাল ৯.১৫ টায় সে কলজে প্রবেশ করে এবং সাইন্স বিল্ডিংয়ের পাশে রিফাত ফরাজী, রিফাত হাওলাদারসহ অন্যদের সাথে হত্যার পরিকল্পনায় অংশ নেয়। পরবর্তিতে পরিকল্পনা মোতাবেক রিফাত শরীফ কলেজ থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে তাকে ঘিরে ধরে মারধর করতে করতে নয়ন বন্ডের হাতে তুলে দেয়। হত্যার সময় যাতে পালাতে না পারে অন্য আসামীদের সাথে রাব্বি আকনও রিফাত শরীফকে ঘিরে রাখে। ঘটনার সময় রাব্বি আকন বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও হত্যা পরবর্তি সময়ে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সাথে একাধিকবার তার মুঠোফোনে কথোপকথনের প্রমান আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৪ ও ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। চার্জ গঠনের পর রাব্বি আকন আদালতে আত্মসমর্পন করেছিল।
৩নং আসামী মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত: বন্ড গ্রপের অন্যমত সদস্য সিফাত ঘটনার আগের দিন ২৫ জুন বিকেলে বরগুনা সরকারি কলেজে রিফাত শরীফ হত্যা পরিকল্পনার মিটিংয়ে উপস্থিত ছিল। পরিকল্পনা মোতাবেক রিফাত শরীফ কলেজ থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের সাথে সিফাতও তাকে ঘিরে ধরে এবং রিফাত ফরাজীর সাথে রামদা আনার দৌড়ে যায়। পরে ফিরে এসে রিফাত ফরাজীর ও নয়ন বন্ড রিফাত শরীফকে এলোপাতারি কোপানোর সময় নিহত রিফাতকে ঘিরে রাখে। সিফাত বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের লেমুয়া গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন ওরফে আর্মি দেলোয়ারের ছেলে। বরগুনা পৌরসভার কলেজিয়েট স্কুল এলাকায় বাবা মার সাথে বসবাস করত। তার বিরুদ্ধে ও এর আগে বরগুনা থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে ৩৪ ও ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ১ জুলাই ২০১৯ তারিখে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
৪নং আসামী রেজোয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয়: বরগুনা সদরের বদরখালী ইউনিয়নের কুমড়াখালী চালিতাতলা এলাকার বাসিন্দা রফিক আলী খান ওরফে রকীবের ছেলে হৃদয়। বন্ডগ্রুপের হত্যকান্ডের সময় টিকটক হৃদয় আসামী রিফাত ফরাজীর সাথে ঘটনাস্থল রেকি করতে থাকে। রিফাত শরীফ কলেজ থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে তাকে অন্যরা ঘিরে দরে টানতে টানতে সামনে নিয়ে যাওয়ার সময় টিকটক হৃদয় দৌড়ে রিফাত ফরাজীর সাথে কলেজের পূর্ব দিকে রাখা দা রামদা আনতে যায় এবং ফিরে এসে রিফাত শরীফকে ঘীরে রাখে। ১ জুলাই ২০১৯ তারিখে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যার পরিকল্পনা ও সরাসরি অংশ নেয়ার অভিযোগে ৩৪ ও ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
৫নং আসামী হাসান সদর উপজেলার ২নং গৌরীচন্না এলাকার বাসিন্দা আয়নাল হকের ছেলে। বরগুনা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডে কলেজ সড়কে তালুকদারের বাড়িত পরিবারের সাথে ভাড়া থাকত হাসান। রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের সময় হাসান ঘটনাস্থল রেকি করা ও রিফাত শরীফ বের হওয়ার পরপরই অন্যদের সাথে টেনে হিচড়ে নিয়ে কোপানোর সময় ঘিরে রাখার অভিযোগ হাসানের বিরুদ্ধে । ১ জুলাই ২০১৯ তারিখে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যার পরিকল্পনা ও সরাসরি অংশ নেয়ার অভিযোগে ৩৪ ও ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
৬নং আসামী মুছা বন্ড এ মামলার একমাত্র পলাতক আসামী। বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার কালাম খানের ছেলে মুছা বন্ড গ্রুপের অন্যতম সদস্য। তার নামের পরে বন্ড ব্যবহার করা হত। ঘটনার সময় সে পরিবারের সাথে ধানসীড়ি সড়কে ভাড়া থাকত। হত্যার আগের অন্যদের সাথে কলেজ সড়কের মাসির দোকানে উপস্থিত ছিল সে। সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হত্যায় সহযোগীতার অভিযোগ মুছা বন্ডের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধেও হত্যার পরিকল্পনা ও সরাসরি অংশ নেয়ার অভিযোগে ৩৪ ও ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যার কারণ হিশেবে ৭ নং আসামী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। বরগুনা পৌরশহরের ২ নং ওয়ার্ডের কড়ইতলা মাইঠা এলাকার মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের জ্যেষ্ঠ কণ্যা মিন্নি। পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে মিন্নির বিরুদ্ধে। রিফাত শরীফকে হত্যার মূল কারণ হিসেবে, রিফাত শরীফের সাথে বিয়ে পরবর্তী নয়ন বন্ডের সাথে মিন্নির সম্পর্কে সৃষ্ট বিরোধীতার জেরেই রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে মিন্নি ও নয়ন বন্ড এমনটি উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবরণীতে বলা হয়, প্রথমে মিন্নি নয়নকে বিয়ে করে। বিষয়টি গোপন রেখে ফের রিফাত শরীফকে বিয়ে করে মিন্নি এবং নয়ন বন্ডের সাথে গোপনে যোগাযোগ ও বাসায় যাতায়ত অব্যহত রাখে। এ নিয়ে রিফাত শরীফের সাথে মিন্নির দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। সবশেষ হেলাল নামের এক যুবকের কাছ থেকে রিফাত শরীফের মুঠোফোন কেড়ে নেয়া থেকে নয়নের সাথে রিফাতের দ্বন্দ্ব চুড়ান্ত রূপ নেয় এবং সবমিলিয়ে মিন্নি ও নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীসহ অন্যরা আগের দিন বিকেলে সরকারি কলেজের শহীদ মিনারের কাছে গোপন বৈঠক করে রিফাত শরীফকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের পরিকল্পনাও ছক মেতাবেক পরের দিন রিফাত শরীফকে হত্যা করা হয়।
এছাড়াও অভিযোগপত্রে রিফাতকে নয়ন বন্ডরা কুপিয়ে জখম করার পরও মুঠোফোনে যোগাযোগ ও নয়ন বন্ডের সাথে মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তার আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে মিন্নির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিপরীতে নয়ন বন্ডের মায়ের নামে নিবন্ধিত একটি সিম গোপনে মিন্নি ব্যবহার করত এমন অভিযোগ এনে ওই নম্বরের সাথে নয়ন বন্ডের বিভিন্ন সময়ে কল লিস্ট ও কল ডিটেইলস জমা দিয়েছেন। এছাড়াও আলামত হিসেবে নিহত নয়ন বন্ডের বাসা থেকে জব্দ স্যালোয়ার কামিজ, আই ভ্রু, মিন্নির ছবি, মাথা আচড়ানো চিরুনি, চিরুনিতে পেচানো নারীদের চুল জমা দেয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রের বিবরণীতে অধিকাংশ জায়গায় মিন্নির বিরুদ্ধে রিফাত হত্যায় ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছে।
গত বছরের ২৬ জুন রিফাত শরীফ নিহত হওয়ার পর ২৭ জুলাই নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদি হয়ে বরগুনা থানায় ১২জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৫-৬ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দীকা মিন্নিকে প্রধান সাক্ষি রাখা হয়। ২ জুলাই ২০১৯ তারিখ ভোরে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ০০৭ বন্ড গ্রুপের প্রধান নয়ন বন্ড। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই ভাগে বিভক্ত অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। ঘটনায় জড়িত প্রাপ্তবয়ষ্ক ১০জন ও কিশোর ১৪জনের আলাদা বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। প্রাপ্তবয়ষ্কদের অভিযোগপত্রে মিন্নিকে ৭নং আসামী রাখা হয়।
বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ ৭৬জন সাক্ষির সাক্ষগ্রহন ও অন্যান্য তথ্য উপাত্ত উপস্থাপনসহ ৪৩ কার্যদিবসের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করে ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেন।